বার বার পিছনোর পরে শেষ পর্যন্ত আগামিকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠতে পারে লোকপাল বিলের চূড়ান্ত খসড়া। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ এ কথা জানিয়ে বলেন, “সম্ভবত কাল মন্ত্রিসভায় লোকপাল বিলটিতে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে বুধবার সংসদে বিলটি পেশ করা যেতে পারে।”
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ করাতে তাঁরা যে বদ্ধপরিকর, সে কথা বারেবারেই জানিয়েছেন সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ দু’জনেই। কিন্তু বিরোধীরা নয়, লোকপাল বিলের খুঁটিনাটি নিয়ে সরকারের মধ্যেই মতান্তরের কারণে এখনও তার চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত খসড়ায় অনুমোদন দিয়ে তা সোমবার সংসদে পেশ করা হবে। রবিবার রাতে জানানো হয়, লোকপাল নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে আজ। কিন্তু আজকের বৈঠকও কাল, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত সেখানেই লোকপাল বিলের চূড়ান্ত খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সে ক্ষেত্রে কি সংসদের চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ করানো সম্ভব হবে? সময় বাড়ন্ত বুঝে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে সংসদের অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৯ তারিখ পর্যন্ত করা হতে পারে বলে জানান তিনি। বিজেপি তাতে সায়ও দিয়েছে। তবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল বলেন, “২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব হাতের পাঁচ মাত্র। চেষ্টা হবে ২৩ তারিখের মধ্যে বিলটি পাশ করানোর। কেন না বছর শেষে অধিবেশনের মেয়াদ আরও বাড়ানো নিয়ে দলমত নির্বিশেষে অনেক সাংসদেরই আপত্তি রয়েছে।” সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের পুরনো লোকপাল বিলে মোটামুটি ৬০টি সংশোধন করতে হচ্ছে। সেই কারণেই চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করতে সময় লাগছে। তবে মূল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সিবিআইয়ের প্রসঙ্গটি। অণ্ণা হজারেরা গোড়া থেকে দাবি করছেন, সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকে লোকপালের আওতায় রাখা হোক। কিন্তু সরকারের তাতে আপত্তি রয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্র এটুকু মেনে নিয়েছে যে, সিবিআই ডিরেক্টর নিয়োগের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। তাতে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও লোকপাল থাকবেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম আবার প্রশ্ন তুলেছেন, সে ক্ষেত্রে সিবিআই ডিরেক্টর কার কাছে রিপোর্ট করবেন। বর্তমানে সিবিআই ডিরেক্টর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করেন। এই সমস্যার নিয়ে নতুন করে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে সরকার।
কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “কোনও দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে লোকপাল সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে। কিন্তু তদন্ত শুরু থেকে চার্জশিট পেশ পর্যন্ত সিবিআইয়ের কাজে সরকার বা লোকপাল কেউই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।” পরে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীও জানান, সিবিআইয়ের স্বশাসন সুনিশ্চিত করতে চায় সরকার।
গত কালের মতো আজও সরকারের তিন আইনি মস্তিষ্ক সলমন খুরশিদ, কপিল সিব্বল ও চিদম্বরম লোকপাল বিল চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে আবার প্রণব মুখোপাধ্যায় না থাকায় তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছুটা জল্পনা হয় যে, কপিল-চিদম্বরমদের সঙ্গে মতান্তর রয়েছে প্রণবের। তবে পরে সলমন জানান, লোকপাল বিল চূড়ান্ত করার জন্য আজ গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হবে। চূড়ান্ত খসড়াটি রাতেই প্রণববাবু ও প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হবে। কাল দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। তবে সরকারের লোকপাল নিয়ে সব দল সহমত হবে কিনা, সেই সংশয় থাকছেই। পবন বনশলের জবাব, “সরকারের লোকপাল বিলটি সবার মনের মতো হবে, এমন আশা করা হচ্ছে না। বিলটি পাশ করাতে যে কেউই বাধা দেবে না, সে বিষয়ে সরকার আশাবাদী।” |