খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে এক দফা ধাক্কা খাওয়ার পরে মনমোহন সিংহের সরকার নতুন বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বিল নিয়ে শরিক এবং বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা সেরে তবেই পদক্ষেপ করতে চাইছেন মনমোহন স্বয়ং।
সম্প্রতি রাশিয়া সফর থেকে ফেরার সময়ও আর্থিক সংস্কারের নানা পদক্ষেপ করার ব্যাপারে সরকারের ‘ব্যথর্তা’ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। জবাবে তিনি কবুল করেন, সরকারের কাছে যে হেতু প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই, তাই প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জোট শরিকদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। শিল্পমহলও এই বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অনুধাবন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মনমোহন। কিন্তু এখন তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, বিভিন্ন বিল নিয়ে শরিক ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করেই এগোতে হবে। আজ অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় পেনশন ও কোম্পানি বিল নিয়ে আলোচনা করতে আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি বিল সংসদে পেশ করানোর ব্যাপারে সম্মতি আদায় করতেও গুলাম নবি আজাদ আজ পৃথক বৈঠক করেন সুষমা ও জেটলির সঙ্গে।
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পেনশন বিলের দু’টি বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। সেই জট কাটিয়ে পেনশন বিলের পথ পরিষ্কার করতে আজ বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রণববাবু। শেষে ঠিক হয়, স্থায়ী কমিটির দু’টি আপত্তিই মেনে নেওয়া হবে। অর্থাৎ, এক দিকে ন্যূনতম আয় যেমন সুনিশ্চিত করা হবে, অন্য দিকে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে তা সংসদে এনে আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা। এবং আইনে এমন ব্যবস্থা রাখা, যাতে পরে কোনও সরকার এই বিনিয়োগটি বাড়াতে বা কমাতে চাইলে তাকে সংসদের মাধ্যমেই তা করতে হয়। আবার সুনিশ্চিত আয়ের পাশাপাশি কেউ যদি কোনও ঝুঁকি নিতে চান, সেই ব্যবস্থাও রাখা হবে বিলে। আজাদের বিলটি সংসদে পেশ করতেও তাঁরা বাধা হবে না বলে সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। এমনকী, তাঁরা মনে করছেন, বামেদেরও আর এখন এই বিলের বিরোধিতা করা উচিত নয়। কারণ, তাঁদের আপত্তিগুলিও এখন মেনে নিচ্ছে সরকার।
পরে সুষমা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, প্রণবদা লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু বৈঠকে গিয়ে জানা গেল, দু’টি বিল নিয়ে সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছিল। সরকার এখন বুঝতে পারছে, আগেভাগে আলোচনা করে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ।” জেটলির বক্তব্য, “আমরা যখন সরকারে ছিলাম, তখনও বিরোধী শিবিরে থাকা প্রণব মুখোপাধ্যায়, মনমোহন সিংহের কাছে গিয়ে বিভিন্ন বিল নিয়ে মত নিতাম। তাঁরা সম্মতি দেওয়ার পরেই আমরা বিল সংসদে আনতাম। কিন্তু এখনকার সরকার কাউকে পরোয়া না করে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ারই পথ বেছেছিল। এই মনোভাব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করা যায় না।”
পেনশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্কারের বিলের খসড়াটি ইউপিএ-র শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের মতে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিতে কড়া বিরোধিতা করলেও মমতা এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলবেন না। মনমোহন মন্ত্রিসভার সদস্য পবন বনশলও বলেন, “পেনশন বিল নিয়ে তৃণমূলও সরকারের সঙ্গে রয়েছে। এখানে আম-আদমির কথা মাথায় রেখে আরও একটি সংশোধন করা হবে। কেউ যদি টাকা মাঝপথে তুলে নিতে চান, তার সংস্থানও বিলে রাখা হচ্ছে।”
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের মতে, সব ক্ষেত্রে আলোচনার এই প্রথা মানা হচ্ছে না। আজও সরকার অনেক ‘ভুলত্রুটি’ সত্ত্বেও লোকসভায় হট্টগোলের মধ্যে ‘কস্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট বিল’টি পাশ করিয়ে নেয়। বিজেপি এতে সংশোধনী আনতে চেয়েছিল। বস্তুত, ওই হট্টগোলের মধ্যে তারা তিনটি বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে। বিজেপি নেতারা এ বারে সংশোধন আনার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন। |