পুরসভার বিল্ডিং আইনের ফাঁক গলে বেআইনি নির্মাণ বৈধকরণের পথ এ বার বন্ধ হবে। তার জন্য সংশোধন করা হচ্ছে ওই আইনের ২৫ নম্বর ধারা।
ওই ধারায় বলা আছে, নির্দিষ্ট ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ বজায় রেখে অনুমোদিত নকশা থেকে বাড়ির ভিতরে সামান্য অদল-বদল করা হলে কিছু জরিমানা দিয়ে সেই অংশের বৈধতা পাওয়া যাবে। সেই আইনকে ‘রক্ষাকবচ’ করে শহরের কয়েক হাজার বাড়ির নকশা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। যেমন, আমরি-র যে ভবনে আগুন লেগে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার বেসমেন্টে শুধুই গাড়ি রাখা হবে বলে নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। পরে ২৫ নম্বর ধারায় জরিমানা দিয়ে সেখানে ‘কোবাল্ট ইউনিট’ করা হয়। যা বেআইনি। কারণ, এটি শুধু নকশার বদলই নয়, ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তা মূল নকশার বিরোধী। এখানে ২৫ নম্বর ধারার সুযোগ নিয়ে ‘চেঞ্জ অফ ইউজ’ করা হয়েছে। কিন্তু, তা করা উচিত ছিল পুর-আইনের ৪১৬ নম্বর ধারায়।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের অনুমোদন পুরসভা আর দেবে না। আমরি-কাণ্ডের পরে মুখ্যসচিবের ঘরে এক জরুরি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এর পর থেকে বেআইনি বাড়িকে আর কোনও মতেই বৈধতা দেওয়া হবে না।” তিনি জানান, মুখ্যসচিবের বৈঠকের ভিত্তিতে প্রতিটি বরোকে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল-নার্সিংহোম-স্কুল বা বিপণন কেন্দ্রের কোন অংশ বেআইনি, তা চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, হাসপাতাল-নার্সিংহোমের ক্ষেত্রেই শুধু এই ধরনের বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা হবে। এখন বিল্ডিং তৈরির সব ক্ষেত্রেই তা প্রসারিত করছে সরকার।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আইনে যেটুকু ছাড় দেওয়া আছে, তার বেশি যে কোনও ছাড়ের বিরুদ্ধে আমি। এই আইন বদলের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা একটি নোট পাঠিয়েছি আইন দফতরে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে ওই ধারা বদলে সুযোগ-সুবিধা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। শুধু কলকাতা পুরসভা নয়, রাজ্যের সব পুরসভার ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন করা হবে। যাতে অনুমোদিত নকশা থেকে সরে আসা না যায়। বিশেষ করে বেসমেন্টের ক্ষেত্রে।” পুরমন্ত্রী আরও জানান, মেয়র পারিষদের বৈঠকে কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে জমির মাপ অনুযায়ী প্রাপ্য ‘ফ্লোর এরিয়া’র থেকে বেশি জায়গা পাইয়ে দেওয়ার রেওয়াজের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বাড়ি তৈরির আগেই প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হবে। এমনই বিধান রাখা হবে, যাতে বাড়ি তৈরির পরে আর একটি তলাও বাড়ানোর অনুমতি না দেওয়া হয়।
সোমবার পুরসভার অধিবেশনে কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায় বলেন, “পুরসভার হাতে পর্যাপ্ত আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শহরে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা যাচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, পুরসভা ও পুলিশের একাংশের মদতেই বেআইনি বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে শহরে। কাউন্সিলরদেরও কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন এই ক্ষেত্রে। সিপিএম কাউন্সিলর দেবাংশু রায় বলেন, “শহর বেআইনি বাড়িতে ছেয়ে যাচ্ছে। প্রোমোটারদেরও বেআইনি বাড়ি তৈরির ঝোঁক বাড়ছে।” |