ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের পরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড তিলজলায়। সোমবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ তিলজলার সি এন রায় রোডে একটি চারতলা জুতো কারখানায় আগুন লাগে। প্রাণহানির খবর নেই। তবে ঘিঞ্জি এলাকায় দাহ্য পদার্থে ঠাসা কারখানায় আগুন এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গভীর রাত পেরিয়ে যায়। ১৫টি ইঞ্জিন নিয়েও জলের অভাবে হিমশিম খেতে হয় দমকলকর্মীদের। পাশের বস্তি ও অন্য বাড়ির বাসিন্দারা আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। রাতেই ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগুন কী ভাবে লাগল, বেশি রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে দমকলের সন্দেহ, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। আগুন ব্যাপক আকার নেয় কারখানাটি রবার, চামড়া, আঠার মতো নানা ধরনের অতিদাহ্য পদার্থে ভর্তি থাকায়। দমকল পৌঁছে গেলেও ঘিঞ্জি এলাকায় সরু গলিতে গাড়ি ঢোকানো যাচ্ছিল না। সব থেকে বেশি বেগ পেতে হয় জল না-থাকায়। এক সময় দমকলেরও জল ফুরিয়ে যায়। কাছাকাছি জলের উৎস না-থাকায় অনেক দূর থেকে জল আনতে সময় লাগে। দাহ্য পদার্থের ইন্ধনে আগুন তত ক্ষণে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। |
জ্বলছে জতুগৃহ। সোমবার রাতে তিলজলায়। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দাউদাউ করে জ্বলছে প্রায় পুরো বাড়িটিই। আগুনের মোকাবিলায় এলাকার লোকজনও দমকলের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন। কিন্তু জলের জোগান না-থাকায় সকলেই অসহায়। জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় এবং রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান আর পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে মমতা নিজে আগুন নেভানোর তদারক করছেন। দমকলমন্ত্রী বলেন, “ওই কারখানায় দমকলের ছাড়পত্র ছিল কি না, খোঁজ নিচ্ছি।” তিনি জানান, শীঘ্রই ই এম বাইপাসের ধারে একটি দমকল কেন্দ্র খোলা হবে।
কয়েক মাস আগে ওই অঞ্চলেই রং, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়ামের একটি গুদামে আগুন লেগেছিল। দমকলের তরফে তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, এলাকার কারখানাগুলি বৈধ কি না, তারা অগ্নিবিধি মানছে কি না, সব যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই আশ্বাসে কোনও কাজই হয়নি। রমরমিয়ে চলছে অসংখ্য অবৈধ কারখানা। তাদের সকলে যদি দমকল বিধি মেনে চলত, তা হলে এ রাতের মতো ভয়াল অগ্নিকাণ্ড ঘটত না বলে অনেক বাসিন্দার অভিমত। পুলিশ ও দমকলের লোকজনও জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো বেআইনি কারখানায় ভর্তি ওই এলাকা কার্যত জতুগৃহ।
সোমবার রাতেই বালির কালীতলায় একটি আবাসনের একতলায় সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। প্রচণ্ড ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা ফ্ল্যাট ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। পুলিশ ও দমকল জানায়, জি টি রোডে বালিগঙ্গা অ্যাপার্টমেন্ট নামে ওই আবাসনের তিনটি ব্লকে ১২০টির মতো ফ্ল্যাট আছে। নীচের তলার পুরোটা নিয়ে সুপার মার্কেট। সেই বাজারের পিছনের দিকে প্লাস্টিকের একটি গুদাম থেকেই প্রথমে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। গোটা আবাসন-চত্বর দ্রুত ঢেকে যায় ধোঁয়ায়। উল্টো দিকে একটু দূরেই বালি দমকল কেন্দ্র। কিন্তু কেউ খবর দেয়নি। দমকলকর্মীরা নিজেরাই সাতটি ইঞ্জিন নিয়ে ছুটে যান। তাঁরাই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন। |