কোথাও শীতবস্ত্র বিক্রেতাদের মাথায় হাত।
কেউ কেউ আবার বলছিলেন, শীত তো পড়ছেই না! তবে কি এ বার শীতবস্ত্র আলমারিতেই রয়ে যাবে?
চিত্রটা বদলে গেল শুক্রবার বিকেল থেকে। গত দু’দিন ধরে শীতে আক্ষরিক অর্থেই ‘হাড় হিম’ অবস্থা শিল্পাঞ্চলবাসীর। সূর্য পশ্চিমে ঢলতেই তাপমাত্রার পারদ নামছে হু হু করে।
আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী, শনিবার পানাগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার তা আরও কমে দাঁড়ায় ৫.৭ ডিগ্রিতে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে তার আশপাশেই। ২০১০ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পানাগড়ে তাপমাত্রা নেমে যায় ৫ ডিগ্রিতে। আর তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বা তার কম হওয়ার অর্থ, সেই এলাকা শৈত্যপ্রবাহের কবলে। এ বারও সেই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম হবে না, এমনটাই অনুমান করছেন পানাগড়ের বাসিন্দারা।
ডিসেম্বর মাস পড়ে গেলেও শীতের দেখা মেলেনি। শীতের জামাকাপড় রয়ে গিয়েছিল বাক্স-বন্দী হয়েই। ওদিকে কেউ কেউ সামান্য শীত পড়তেই শীতবস্ত্র বের করে গায়ে চড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তাঁদের যুক্তি, শীত তো পড়ছেই না। |
এত দাম দিয়ে শীতবস্ত্র কিনে তা কি শুধু আলমারিতেই থেকে যাবে! কবে শীত আসবে বা আদৌ আসবে কি না তা নিয়ে চর্চা ছিল তুঙ্গে।
শুক্রবার বিকেল থেকেই উল্টো সুর তাঁদের গলায়। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে অনেকখানি। শীতে রীতিমতো কাহিল হয়ে তাঁদেরই কেউ কেউ এখন বলছেন, “হাল্কা শীত থাকুক অনেক দিন ধরে। কিন্তু গরমের মাঝে হঠাৎ তাপমাত্রা এত নেমে গেলে কি আর সহ্য করা যায়!”
শীতের কবলে সবচেয়ে কাবু স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা। প্রবল ঠান্ডায় বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না। অথচ রোজকার রুটিন মেনে ভোরে উঠে প্রস্তুত হয়ে উঠে পড়তে হচ্ছে স্কুলের গাড়িতে। তবে যাঁরা সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আর রাতে বাড়ি ফেরেন তাঁদের কষ্টও কিছু কম নয়। রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চলের বধূ সোমা দত্ত, লতা দাসরা জানান, তাঁদের স্বামীরা বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। সকালের পালিতে কাজে যেতে হয় ভোর ৫টায়। তাঁদের কথায়, “এই ঠান্ডায় ভোর ৪টেয় উঠে পড়তে হয়। কারণ ওদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে হয় আমাদেরই।”
গ্রামাঞ্চলে দুঃস্থ বাসিন্দাদের উপযুক্ত শীতবস্ত্র নেই। সকাল-সন্ধ্যায় গাছের পাতা, শুকনো ডাল জড়ো করে তাঁদের অনেকেই আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন। সেই আগুনে সেঁকে নিচ্ছেন হাত-পা। অনেকে আবার রান্নার উনুনের পাশেই বসে পড়ছেন। তেমনই এক জন আমরাই গ্রামের হিরালাল দাস বলেন, “শীতবস্ত্র পরেও শীতকে কব্জা করতে পারছি না। তাই আগুনের পাশে বসে যাচ্ছি।”
কিন্তু কী বলছেন পানাগড়বাসী? স্থানীয় বাসিন্দা সুখেন তিওয়ারি বা বন্দনা বন্দ্যোপাধ্যাদের কথায়, “তাপমাত্রা কমলেই আমাদের এলাকার নাম খবরের কাগজে চলে আসে। শনিবার তো আবার শুনেছিলাম, কালিম্পং, গ্যাংটককেও হারিয়ে দিয়েছে পানাগড়!” |