অগ্নি নির্বাপণের ছিটেফোঁটা ব্যবস্থা নেই। অনেক ক্ষেত্রে নেই দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তাও। অথচ দিনের পর দিন সেখানেই চলছে বিয়ে-অন্নপ্রাশনের মতো নানা অনুষ্ঠান। বাড়িগুলি ঠিক কী ধরনের হওয়া উচিত, তার একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে আসানসোলের দমকল বিভাগ। তবে আমরি-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে দমকলের তরফে এই নিয়মাবলী জারি করা হলেও প্রায় কোনও বাড়িতেই তা মানা হয়নি।
গত কয়েক বছরে শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বহু অনুষ্ঠান বাড়ি। একই ছাদের তলায় একাধিক তল বিশিষ্ট বাড়িগুলিতে একই সঙ্গে রান্না খাওয়া ও উৎসবের আসর বসে। দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ জানিয়েছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, প্রতিটি অনুষ্ঠান বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার করে রান্নাবান্না হয়। অনুষ্ঠানের দিন বাড়ি সাজানোর জন্য প্রচুর দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। আগুন লাগলে তা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দমকলের আশঙ্কা ও অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা শহরের কয়েকটি অনুষ্ঠান বাড়ি ঘুরলেই বোঝা যায়। এই বাড়িগুলি মূলত বড় রাস্তার ধারে হলেও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার ছিটেফোঁটা নেই। হাটন রোড এলাকায় ডান দিকে একটি অনুষ্ঠান বাড়ি আছে। সেখানে দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। সেন র্যালে রোডের একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিন তলা ওই বাড়িতে একটি মাত্র ওঠানামার চার ফুটের সিঁড়ি আছে। অন্য কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নেই ফায়ার লাইসেন্সও। বাড়িটির কর্ণধার অরূপ লাহা অবশ্য বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় এ’বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ বার নির্দেশ এলে সব ঠিক করে নেব।” |
কিন্তু তার আগেই হঠাৎ আগুন লাগলে বিপর্যয় মোকাবিলার কী ব্যবস্থা এই বাড়িগুলিতে আছে তা জানাতে পারেন খোদ দমকলও। কারণ, এই বাড়িগুলির কোনও হিসেবই নেই তাঁদের কাছে। একটি বাড়িরও ফায়ার লাইসেন্স দেননি তাঁরা। ফলে শুধু শপিং মল, বহুতল বা নার্সিংহোম নিয়ে নয়, প্রশ্ন উঠেছে আসানসোলের অনুষ্ঠান বাড়ির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার হাল হকিকৎ নিয়েও।
কী আছে এই নিয়মাবলীতে? সেলিম জাভেদ জানিয়েছেন, বাড়িগুলি একাধিক তল বিশিষ্ট হলে একেবারে নীচের তলায় সম্পূর্ণ পৃথক একটি উন্মুক্ত জায়গায় রান্না করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি তলেই রাখতে হবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। ওঠানামার জন্য কমপক্ষে ১০ ফুটের একাধিক চওড়া সিঁড়ি বানাতে হবে। বেরোনোর জন্য রাখতে হবে একটি আপতকালীন রাস্তাও। অনুষ্ঠান বাড়িগুলির চারপাশে দমকলের গাড়ি ঢোকা-বেরোনোর জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে।
দমকলের তরফে এই নিয়মাবলী জারি করা হলেও আসানসোলের প্রায় কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতেই এখনও পর্যন্ত এই নিয়ম মানা হয়নি। এ সব যাচাই করার কাজ আসানসোল পুরসভার। কিন্তু শহরে এ রকম কতগুলি অনুষ্ঠান বাড়ি আছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি পুরসভাও। অথচ, দমকলের ওসি জানিয়েছেন, বাড়িগুলির ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় দমকলের এনওসি দেখে নেওয়ার কথা পুর কর্তৃপক্ষেরই। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আসানসোলে কতগুলি অনুষ্ঠান বাড়ি আছে তার তালিকা আমি পুরসভার বাস্তুকারের কাছ থেকে চেয়েছি। শহরের অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই কমিটি শহরের অনুষ্ঠান বাড়িগুলিও ঘুরে দেখবে। তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মনীতি মেনে চলতে বাড়ির মালিকদের নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।” |