বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়ায় বন্ধ হল ৯টি খনির কাজ। আরও ২২টি খনির উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। টাকা বকেয়ার দাবিতে ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন (ডিপিএসসি) বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ মিলছে না কয়েকশো কর্মী আবাসনেও। ডিপিএসসি জানিয়েছে, টাকা না-পেলে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে না। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা আদালতে যাবেন।
কিছু দিন ধরেই বকেয়া নিয়ে ‘কাজিয়া’ চলছে ইসিএল এবং ডিপিএসসি-র মধ্যে। কয়লার দাম না মেটানোয় ডিপিএসসি-র চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করেছে ইসিএল। ফলে ওই কেন্দ্রে ৩০ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার দুপুরে জামুড়িয়ায় ইসিএলের শ্রীপুর, কেন্দা ও কাজোড়া এরিয়ায় এবং সোমবার সকালে রানিগঞ্জের কুনস্তরিয়া ও কুলটির সোদপুর এরিয়ায় বেশ কিছু কোলিয়ারি ও আবাসনে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয় ডিপিএসসি।
ডিপিএসসি-র প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশ দাশগুপ্ত জানান, পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ার রেগুলেটরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে ইসিএলের কাছে ৬৩ কোটি টাকা তাঁরা পান। তাঁর দাবি, বারবার বলা সত্ত্বেও ইসিএল টাকা দিচ্ছে না। উল্টে চিনাকুড়ি কেন্দ্রে কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সোমেশবাবু বলেন, “সংযোগ ছিন্ন করা ছাড়া উপায় ছিল না। ১২৭টি পয়েন্টে ইসিএল-কে আমরা বিদ্যুৎ দিই। এখন ২০টি পয়েন্টে ছিন্ন করা হয়েছে। অন্যগুলিতেও করা হবে।”
ইসিএলের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) তথা কয়লা সরবরাহ দফতরের বিভাগীয় প্রধান সুব্রত চক্রবর্তীর দাবি, “সাধারণত সরকারি সংস্থার কাছ থেকে ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ নেওয়া হয় না। আমরা ডিভিসি-র কাছেও বিদ্যুৎ নিই। সেখানে এই টাকা দিইনি। ডিপিএসসি-কে কেন দেব?” ডিপিএসসি-র প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশবাবুর পাল্টা দাবি, “রেগুলেটরি কমিশনে এমন বলা নেই যে, সরকারি সংস্থাকে ওই ডিপোজিট দিতে হবে না।”
চিনাকুড়ি কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করা প্রসঙ্গে ইসিএলের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) সুব্রতবাবু বলেন, “আমরা ওদের কাছে ১৩ কোটি টাকা পাব। অন্তত ৪ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে বলেছি। ওরা দিচ্ছেন না। তাই কয়লা দেওয়া বন্ধ করেছি।” সোমেশবাবুর অবশ্য দাবি, “আমরা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে রাজি। কিন্তু ওরা এ ব্যাপারে লিখিত কিছু দিতে চাইছেন না। তাই টাকা দিতে পারছি না।”
বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হওয়ায় ইসিএলের দৈনিক প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। তিনি জানান, বিহারের কহেলগাঁও, এনটিপিসি-র একাধিক কেন্দ্র, ফরাক্কা এবং সিইএসসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি দিন কমপক্ষে ১৫টি কয়লার রেক পাঠায় ইসিএল। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদা মতো কয়লা পাঠানো যাবে না। ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হতে পারে। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ার রেগুলেটরি কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি। সমস্যা মেটাতে আদালতে যাব।” |