তৃণমূল অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের অফিসে এক ঠিকাদারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে। তাঁর নাম বিজন নন্দী। তিনি হলেন তৃণমূল অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন (আইএনটিটিইউসি)-এর এনজেপি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। তাঁর ভাই জয়দীপ নন্দী শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত এলাকার কাউন্সিলর। শুক্রবার শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির এনজেপি ফাঁড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। রেলের ঠিকাদার ধ্রুব যাদবের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিজনবাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিজনবাবুর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে অভিযোগ’ তোলা হয়েছে, এই দাবিতে এ দিন এনজেপি ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেয় আইএনটিটিইউসি। পাশাপাশি, ওই সংগঠনের তরফে নিতাই পাল নামে এক জন শ্রমিক ধ্রুববাবুর বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, কাজ করিয়েও পুরো টাকা না-দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন ওই ঠিকাদার। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “উভয় পক্ষের অভিযোগ মিলেছে। পুলিশ দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু করেছে।”
পুলিশ জানায়, কাটিহারের বাসিন্দা ধ্রুববাবু এনজেপিতে রেলের কাজের বরাত পেয়েছেন। সেই সুবাদে কাজও করছেন। ধ্রুববাবুর অভিযোগ, কদিন আগে তাঁকে তৃণমূল অনুমোদিত সংগঠনের অফিসে ডেকে নিয়ে যান বিজনবাবু। সেখানে তাঁর কাছে ২ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। তিনি দিতে রাজি না-হলে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তার পরে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান ধ্রুববাবু। শুক্রবার মামলা রুজু হয়।
অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বিজনবাবু ও তাঁর কাউন্সিলর ভাই জয়দীপবাবু। বিজনবাবুর দাবি, “ওই ঠিকাদারকে আমি চিনি না। শুনেছি স্থানীয় ঠিকাদার সংগঠনের সঙ্গে তাঁর গোলমাল হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরিও দেননি। সে জন্য শ্রমিকেরা ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছেন।” তাঁর দাবি, “এনজেপিতে তৃণমূলের সংগঠন বাড়ছে। তাই সিপিএম আর কংগ্রেস একজোট হয়েছে। তারাই এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।” কাউন্সিলর জয়দীপবাবুও অভিযোগের পিছনে ‘চক্রান্ত’ রয়েছে বলে দাবি করেছেন। জয়দীপবাবু বলেন, “যাঁরা নেতৃত্বে এনজেপিতে সংগঠনের বিস্তার হচ্ছে, তাঁর নামে মিথ্যে অভিযোগ কারা তুলতে পারে সেটা সকলেই জানেন। তা ছাড়া, কে ঠিকাদারকে এসপির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটাও দেখা দরকার।”
বস্তুত, জয়দীপবাবুর অভিযোগের তির যে তাঁর বিরুদ্ধে সে কথা বুঝতে পেরেছেন জলপাইগুড়ি জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি সৈকতবাবু। তিনি বলেন, “এনজেপিতে মাঝেমধ্যেই চোরাই তেলের কুয়োয় আগুন লাগে। ওখানে চোরাই তেলের সিন্ডিকেট চলে। ইন্ডিয়ান অয়েল লাগোয়া এলাকায় গিয়ে কান পাতলেই শোনা যায়, ফি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা কোন নেতা, কোন কর্তার কাছে পৌঁছয়। আমাদের কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। পুলিশ কী করে দেখি! তার পরে যথাসময়ে জনসমক্ষে সব প্রকাশ করা হবে।”
ওই জায়গাটি শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৫ নম্বর এলাকায় পড়লেও প্রশাসনিক ভাবে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের অধীন। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “আইন আইনের পথে চলুক। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি সৎ ও পরিচ্ছন্ন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ঘটনা দলের মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলবে না।” |