চা শ্রমিকদের নানা দাবি-দাওয়া ও আদিবাসীদের সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করবে সিপিএম। এমনকী, পাহাড়ে চা শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে দরকার পড়লে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গেও যৌথ আন্দোলনে যাবে সিপিএম। শনিবার সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের পরে এ কথা জানিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। দলের জেলা সম্মেলনে ফের সম্পাদক হয়েছেন পাহাড়ের প্রবীণ নেতা সাঙ্গপাল লেপচা। তিনি এই নিয়ে ৫ বার জেলা সম্পাদক হলেন। আশির কোঠায় থাকা সাঙ্গপাল লেপচাকে যে সম্পাদক পদে রাখা হবে তা গোড়া থেকেই নিশ্চিত ছিল। কারণ, গত বিধানসভা ভোটে পাহাড় তো বটেই, সমতল শিলিগুড়িতে একটি আসনও না-পাওয়ার জেরে জাতিগত সমস্যা, স্বায়ত্তশাসন নিয়ে নতুন করে ভাবছে সিপিএম।
এই ব্যাপারে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেছেন, “পাহাড়ের জাতিগত সমস্যা নিয়ে আলাদা দলিল তৈরি হয়েছে। ঠিক হয়েছে, চা শ্রমিকদের দাবি ও সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করব। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য দরকার পড়লেও মোর্চার সঙ্গেও একসঙ্গে হাঁটা হবে। তবে মোর্চা কিংবা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সঙ্গে কোথাও কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে একসঙ্গে যোগ দেওয়া হবে না।”
হঠাৎ এমন যৌথ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত কেন? সিপিএমের অন্দরের খবর, পাহাড়ে নেপালিভাষী, তরাই-ডুয়ার্সে আদিবাসীদের মধ্যে দলের প্রভাব যে ক্রমশ তলানিতে তা গত বিধানসভার ভোটের ফলেই স্পষ্ট হয়েছে। তার উপরে সরকার গঠনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিটিএ চুক্তি করে পাহাড়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করেছেন। ডুয়ার্সেও উন্নয়নে গতি আনার স্পষ্ট বার্তা দিয়ে আদিবাসীদের কাছে টানতেও মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন। পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সে মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সফর করে নানা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনেছেন।
ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে পরিষদ নেতারাও নতুন করে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। সে জন্য পরিষদের কয়েকজন নেতা মোর্চার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গোর্খা-আদিবাসী টেরিটোরিয়াল অথরিটি গড়ার দাবি তুললেও তা সংগঠনের শীর্ষ নেতারা মানেননি। ঘটনাচক্রে এ দিনই চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা শুকরা মুন্ডাকে সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দু’বছর এবং একই ভাবে রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পোকে এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। কলকাতায় পরিষদের রাজ্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর পরিষদ জন বার্লাকে সাসপেন্ড করে।
পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকে বলেন, “ওঁরা তিন জন সংগঠনের রাজ্য কমিটিকে না-জানিয়ে মোর্চার সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে একযোগে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেন। এটা পরিষদের নাম ভাঁড়িয়ে কাজের সামিল। সে জন্য জন বার্লাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদেরও শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তেজকুমার টোপ্পো গত এক মাসে অনেকটা সংশোধিত হয়ে মোর্চার সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। এমন চললে ৩ মাস পরে ওঁর বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।” শাস্তির কথা শুনে জন বার্লার প্রতিক্রিয়া, “পরিষদের নামেই জিএটিএ দাবিতে আন্দোলন করব। রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে যাব।”
পাহাড়ে জিটিএ গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার দাবিতে সরব মোর্চা। তা ছাড়া, পাহাড় ও সমতলের চা শ্রমিক, আদিবাসীদের নানা দাবি এখনও পূরণ হয়নি। তা রাতারাতি পূরণ করা সম্ভবও নয় বলে চা শিল্প মহলই বলছে। মোর্চা ও পরিষদের অনেক নেতাই মনে করছেন, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফের চা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়াকে সামনে রাখার কৌশল নিয়েছে সিপিএম।
এ প্রসঙ্গে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “গত ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সিপিএমকে বিশ্বাস করা খুবই মুশকিল।”
এ দিকে, রাজ্য কমিটির নির্দেশ মেনে দার্জিলিং জেলা কমিটি থেকে আপাতত নকশালবাড়ির জোনাল সম্পাদক শীতল দত্তকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, শীতলবাবু সেনাবাহিনীর একটি বিভাগে পরিবহণ সংক্রান্ত ঠিকাদারির কাজে যুক্ত। |