পিঠোপিঠি দু’টি সরকারি বিজ্ঞপ্তির ভিন্ন ভিন্ন বয়ানে ছাত্র ভর্তি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াল শিলিগুড়ি গার্লস হাই স্কুলে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে। পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি নিয়ে এই বিভ্রান্তির জেরে স্কুলে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্কুলশিক্ষা দফতরের ৯ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে (১৪৮০-এসএল/৫এস-১১৬/২০১০ পিটি-১) বলা হয়েছে, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নিকটবর্তী স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘নিকটবর্তী’ স্কুলের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে: কলকাতার ক্ষেত্রে স্কুলের দূরত্ব হবে ছাত্রের বাড়ি থেকে বড় জোর এক কিলোমিটার। অন্যত্র পড়ুয়ার বাড়ি থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের দূরত্ব দু’কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না। এর আগে নভেম্বরে জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম বিলি হয়। শনিবার লটারি করে ভর্তি শুরুর কথা ছিল। বিকাশ ভবন থেকে পাঠানো ৯ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তি শিলিগুড়িতে পৌঁছয় ১৫ ডিসেম্বর। সেটি মানতে গিয়ে আগের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। এ দিন তাঁরা জানান, দু’কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী ছাত্রীরাই লটারির সুযোগ পাবে। এর পরেই শুরু গোলমাল। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ৫০ টাকার বিনিময়ে সকলকেই ফর্ম দিয়েছেন। তখন বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব উল্লেখ করা হয়নি। তাই সকলকেই লটারির সুযোগ দিতে হবে বলে দাবি করেন তাঁরা। স্কুলের শিক্ষিকা, পরিচালন সমিতির সদস্যদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকেরা।
পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠায় শিলিগুড়ির অতিরিক্ত এসপি অমিত জাভালগি, আইসি পিনাকী মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত কর আশ্বাস দেন আবেদনকারীরা সবাই লটারির সুযোগ পাবে। সে কথা মাইকে ঘোষণা করেন তিনি। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চললেও আর কোনও গোলমাল হয়নি। স্কুলের সামনে বিক্ষোভের সময় সেই পথে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁকে দেখেই অভিভাবকেরা সরকারি নির্দেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। মন্ত্রী বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশ এই গোলমালের দায় চাপিয়েছেন প্রশাসনের উপরে। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে একের পর এক নির্দেশিকা এসেছে। সেগুলি সময় মতো স্কুলে পৌঁছয়নি। এর জেরেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেনের দাবি, আগেই লটারির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই স্কুলের বিভ্রান্তির কোনও কারণ নেই। তা ছাড়া, কোনও ভৌগোলিক পরিধি মেনে ভর্তি করার কথাও বলা হয়নি।
তা হলে বিজ্ঞপ্তিতে এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী পড়ুয়াদের কথা বলা হল কেন? সচিব বিজ্ঞপ্তিতে এ রকম কোনও উল্লেখের কথা মানতে রাজি নন। যদিও ৯ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করেই ওই কথা বলা রয়েছে। তবে বিক্রমবাবুর কথায়, “নানা অভিযোগ আসছিল বলে আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে একাধিক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। ভর্তি প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তন একেবারে নতুন। তাই কিছু বিভ্রান্তি হচ্ছে। আশা করি, ধীরে ধীরে কেটে যাবে।” |