হুবহু নকল, জাল মদের বোতলে লুকিয়ে বিপদ
নামী ব্র্যান্ডের বিদেশি মদের বোতল। গায়ে দাম লেখা ৭৫০ টাকা। মিলছে কিন্তু মাত্র ২৫০ টাকায়।
খদ্দের বিস্মিত, ‘কী করে দিচ্ছেন এত কমে?’
বিক্রেতার ঠোঁটের কোণে হাসি। নিচু গলায় জবাব, ‘এক্সাইজ ডিউটি না দিয়েই বের করে আনা হয়েছে দাদা। যাকে বলে, টানা মাল। তাই দাম কম। জিনিস কিন্তু এক্কেবারে সাচ্চা!’ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! খদ্দের খুশি। ঝটপট টাকা গুনে দিয়ে বগলদাবা করে তিনি ঘরমুখো। বিক্রেতার মুখের হাসিও চওড়া। ভিতরে যা আছে, তার দাম তো মেরে-কেটে শ’খানেক টাকাও নয়। কিছুটা স্পিরিট, কিছুটা জল, হাল্কা মাদক ক্যাপসুল, নির্দিষ্ট রং আর গন্ধের রাসায়নিক এই তো! এক কথায় ‘জাল মদ’, আবগারি দফতরের ভাষায় ‘এফএফএল’ (ফেক ফরেন লিকার)। রসায়নে একটু অদল-বদল করে দিলেই রাম থেকে হুইস্কি, ভদকা থেকে জিন!
ভেজাল দেওয়ার অন্য রাস্তাও আছে। এক বোতল আসল মদে সস্তার রাসায়নিক, কীটনাশক, অল্পসল্প চোলাই মিশিয়ে মেলে তিন-চার বোতল জাল মদ। কলকাতাতেই কয়েকটি আস্তানায় মেলে হুবহু আসলের মতো বোতল, লেবেল, ছিপি, ক্যাপসুল, রাসায়নিক। রাতারাতি সে সব মিশিয়ে বোতলে পুরে তুলে দেওয়া হয় এজেন্টদের হাতে। চোখে দেখে আসল-নকল ফারাক করে সাধ্যি! কখনও সরাসরি দোকান থেকে আসলের দামে, কখনও আবার ‘টানা মাল’ বলে কম দামে বিক্রি হচ্ছে হাজারে-হাজারে।
সম্প্রতি এ রকমই কিছু ‘টানা মাল’ পরীক্ষা করে চোখ কপালে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আবগারি দফতরের কর্তাদের। খড়দহ, নৈহাটি, অশোকনগর মতো বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধরা হয়েছে নকল বোতল, লেবেল, ছিপি, মদ তৈরির সরঞ্জাম। মেয়াদ-উত্তীর্ণ ‘ফ্রুট জুস’-ও মিলেছে। জেলা আবগারি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দিলীপকুমার দে বলেন, “বহু সময়েই আসল বিলিতি মদে দরজা-জানলা বা গ্রিল রং করার রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। খারাপ মানের স্পিরিট, অল্প মাত্রায় কীটনাশকও থাকছে।”
অক্টোবর থেকে রাজ্যে বিলিতি মদের উপরে বাড়তি কর চাপায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। লাফিয়ে দাম বাড়ায় গত দু’মাসে উত্তর ২৪ পরগনায় বিক্রি কমেছে প্রায় ৪১ শতাংশ। এই সুযোগে আরও বাজার দখল করেছে ‘টানা মাল’। এমনকী সরকার অনুমোদিত দেশি মদের বদলে অনেকে সস্তা জাল মদের দিকে ঝুঁকেছেন বলেও মদ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন। ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, “ধাবাগুলিতেও জাল মদ বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ প্রচুর মদ আটক করেছে।”
পুলিশের মতে, ‘টানা মাল’ কিনছে মূলত কমবয়েসীরাই। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও রয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এদের হাতে টাকার জোগান কম। কিন্তু তারা ব্র্যান্ড-সচেতন, দেশি বা চোলাই খায় না। অল্প দামে বিলিতি মদ পাওয়া যাচ্ছে ভেবে কিনছে। মদ্যপানের অভিজ্ঞতা কম থাকায় স্বাদের ফারাকও তারা ধরতে পারছে না।”
যাঁরা চোলাই খান, প্রাণের ঝুঁকি আছে জেনেই খান। নিরাপদ ভেবে ‘বিষ’ খাচ্ছেন কিন্তু বহু, বিশেষত সদ্য তরুণেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.