সরকারের দেওয়া প্রাথমিক সাহায্যের হাজার পাঁচেক খতম। শেষ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীও। এখন সংসার চলবে কী করে, সেই ভাবনা ক্রমশ ছায়া ফেলছে সংগ্রামপুর আর লাগোয়া এলাকাতে। রাজ্য সরকারের ঘোষণা করা পরিবারপিছু ২ লক্ষ ঠাকা ক্ষতিপূরণের দিকেই তাকিয়ে বিষমদে মৃতদের পরিবার। যদিও সে টাকা কবে মিলবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও ঘোষণা নেই সরকারের তরফে। কিছু জানে না জেলা প্রশাসনও।
বুধবারই রাজ্য সরকার বিধানসভায় ওই ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করে। তার পরেই বাধে বিতর্ক। রাজ্য কোষাগারের যখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর’ অবস্থা, তখন ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে তিন-চার কোটি টাকা খরচ করা যুক্তিসঙ্গত কি না, এটা ছিল বিতর্কের একটা দিক। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা আমরি-স্টিফেন কোর্টের মতো ঘটনায় মৃতদের রাজ্য সরকার যে ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে, চোলাই খেয়ে মৃতেরা একই ‘পর্যায়ভুক্ত’ হন কী করে, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু যুক্তি-তর্কের সেই বৃত্তের বহু দূরে উস্তি, মগরাহাট, মন্দিরবাজারের গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারগুলি। |
|
|
রাজিয়া বেওয়া |
তসলিমা বেওয়া |
|
শনিবার রাত পর্যন্ত বিষমদের শিকার ১৭০। সৎকার করার খরচ বাবদ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তরফে প্রতি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে নগদ ১০ হাজার টাকা। মগরাহাটের পশ্চিম বেলারিয়া গ্রামের রাজিয়া বেওয়ার স্বামী আবদুল সালাম মোল্লার মৃত্যু হয়েছে বিষমদে। সদ্য বিধবা জানালেন, স্বামী জরির কাজ করতেন। রোজগারের বেশিটাই উড়িয়ে দিতেন নেশায়। দম্পতির ছ’টি মেয়ে। রাজিয়া বলেন, “খুব চেপে চললেও মাসে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ সংসার চালাতে। এ বার কী করে চালাব বুঝতে পারছি না। মেয়েদের তো বিয়েও দিতে হবে কোনও না কোনও সময়ে। সরকারি সাহায্য না পেলে কী হবে, আল্লা জানেন!” বিধবা জানান, সৎকার খরচ বাবদ পাওয়া সরকারি ১০ হাজার টাকার ৫ হাজার মতো খরচ হয়ে গিয়েছে তাঁর। বাকি টাকায় ক’দিন চলবে জানেন না। একই অভিব্যক্তি ওই গ্রামেরই তসলিমা বেওয়ার। তাঁর স্বামী খুরশিদ ছিলেন দর্জি। বিষমদ স্বামীকে কেড়ে নেওয়ার পরে ছেলেকে নিয়ে ভাই আতিয়া রহমান হালদারের আশ্রয়ে রয়েছেন তসলিমা। বললেন, “সরকারি সাহায্য পেলে আমরা বাঁচব।”
খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের সুবলা বরের দুই ছেলে বাবু ও লক্ষ্মী মারা গিয়েছেন চোলাই-কাণ্ডে। প্রৌঢ়া জানালেন, দুই ছেলের ঘরে দুই বউ, চারটি ছেলেমেয়ে। বললেন, “সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। কী হবে আমাদের?” সংগ্রামপুর, কালিকাপোতা, টেকপাঁজা, ভাড়িউড়ান, গৌড়জল, বামনা, সেকেন্দারপুর, কচুয়াপাড়া, খাঁপুরের মতো আশপাশের গ্রামগুলির ঘরে ঘরে এখন এই ছবি। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, “এখানে জীবিকা বলতে খেতমজুরি, ঝাঁটা-ঝাড়ন-ফুলঝাড়ু বানানো আর জরির কাজ। সে কাজ নিয়মিত নয়। মজুরিও সামান্য। কিন্তু কাজ ছাড়ার উপায় নেই। কারণ, সরকারি প্রকল্পের কাজও প্রায় মেলে না।” তাঁদের দাবি, “সরকার ক্ষতিপূরণের ২ লক্ষ টাকা দিতে দেরি করলে না খেয়েই হয়তো মরবে অনেকে।”
কবে মিলবে সরকারি সাহায্য? উত্তর নেই মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি খইরুল হক কিংবা মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নমিতা সাহাদের কাছে। তাঁদের বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের ঘোষণা জানেন সকলেই। খোঁজও নিচ্ছেন। কিন্তু কবে, কোথা থেকে টাকা পাওয়া যাবে সে খবর আসেনি।” জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “কোথা থেকে টাকা দেওয়া হবে, এখনও সে ব্যাপারে কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা হবে।”
এই ‘আশ্বাস’টুকু ছাড়া আর বিশেষ সম্বল নেই তসলিমা-রাজিয়া-সুবলাদের। |