মোহনবাগান-১ (নবি)
স্পোর্টিং ক্লুব-১ (কালু-পেনাল্টি) |
ওডাফা-মোগার লড়াই দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নতুন এক নায়ককে আবিষ্কার করল শনিবারের যুবভারতীস্ট্রাইকার রহিম নবি।
টিম না জিতলেও ম্যাচ শেষে টানেল দিয়ে বেরোনোর সময় নবিকে ঘিরে দেখা গেল উচ্ছ্বাস। সঙ্গে প্রশ্ন, শেষ কবে স্ট্রাইকারে খেলেছেন নবি?
লেফট ব্যাকে শুরু করলেও ৫৮ মিনিট থেকে নবিই স্ট্রাইকার ওডাফার সঙ্গে। সাহস সঞ্চয় করে সুব্রত ভট্টাচার্য ৪-১-৪-১ ছক পাল্টে তখন ৪-৪-২।
ধনরাজকে নামিয়ে নবিকে স্ট্রাইকার করে দিয়েছিলেন মোহন-টিডি। আর সুযোগ পেয়েই ভারতের সবচেয়ে ‘ইউটিলিটি ফুটবলার’ আর এক বার প্রমাণ করলেন নিজের দক্ষতা। ম্যাচের সেরাও হলেন। সাফের দুরন্ত ফর্মেই তাঁকে খেলতে দেখা গেল। কিংশুকের ক্রস স্পোর্টিংয়ের রোজেন সিংহ মিস করলে সেই বল ধরে ছোট্ট টোকায় স্পোর্টিং গোলকিপার মিলাগ্রিও মেদেইরাকে বোকা বানান নবি। পাণ্ডুয়ার বঙ্গসন্তান নিজেও বলতে পারলেন না, স্ট্রাইকারে খেলে কবে শেষ গোল করেছেন।
নবির গোল দেখে প্রেস বক্সে বসে হইহই করে উঠেছিলেন চোট পেয়ে বসে থাকা মোহনবাগানের তিন স্ট্রাইকার-- হোসে ব্যারেটো, সুনীল ছেত্রী এবং অসীম বিশ্বাস। বাঁ পায়ের প্লাস্টার নিয়ে উত্তেজনায় দাঁড়িয়েও পড়তে দেখা গেল সুনীলকে। সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কত সময় বাকি?” ১৮ মিনিট জেনে এতটুকু খুশি হতে পারেননি সুনীল। কারণ, এক গোলের ব্যবধান সব সময়েই ভয়ঙ্কর। |
হতাশার দুই ছবি। ওডাফা ও সুব্রত। ছবি: উৎপল সরকার |
সাফ কাপের সেরা স্ট্রাইকারের আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। মিনিট ছয়েক পরই মোহনবাগান পেনাল্টি উপহার দিল গোয়ার ক্লাবটিকে। কালুর উদ্দেশে বাড়ানো ভিক্তোরিনো ফার্নান্দেজের ক্রস হাতে লাগান কিংশুক। সংগ্রামকে উল্টো দিকে ফেলে পেনাল্টি থেকে ১-১ করেন কালু। সঙ্গে কেড়ে নেন বাগানের দু’পয়েন্টও। পেনাল্টি দিয়ে দলকে তো ডোবালেনই, সঙ্গে নিজেও শাস্তি পেলেন কিংশুক। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় করিম বেঞ্চারিফার সালগাওকরের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি।
১-১ হওয়ার পরই চুপসে গিয়েছিল গ্যালারি। তার মধ্যেও আশার ঝিলিক দেখাতে পারতেন যিনি, সেই ওডাফাই এ দিন ছিলেন বোতলবন্দি। রোভন পেরেরা-বরুণ দীপরা তাঁকে প্রায় নড়াচড়াই করতে দিচ্ছিলেন না। তা-ও দিনের শেষে নিজের ঝলক দেখাতে মরিয়া হয়ে পড়েছিলেন ওডাফা। পাঁচ মিনিট ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষ সেকেন্ডে গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে ছোট্ট টোকা দিয়ে বল পাঠিয়েছিলেন। যা ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। তার আগে জুয়েলের হেড পোস্টে লেগে ছিল। আর নবিকে বক্সে ফাউল করলেও পেনাল্টি দেওয়া হয়নি বলে দাবি করলেন প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্পোর্টিং কোচ একেন্দ্র সিংহ তাঁর সেরা অস্ত্র মোগাকে বসিয়ে রেখেছিলেন ৫৪ মিনিট পর্যন্ত! ম্যাচের শেষে গর্ব করে বলেও দিলেন, “এটা আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল!” মোগার মাঠের পাশে বসে থাকা অবশ্য সুবিধাই করে দিয়েছিল মোহনবাগানের। দক্ষিণ সুদানি স্ট্রাইকার মাঠে থাকলে চাপে রাখতেই পারতেন আনোয়ারদের। পরে নেমে সেটা তিনি বুঝিয়েও দিলেন ভাল কিছু পাস বাড়িয়ে। গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে। মুখে যাই বলুন, স্পোর্টিং কোচ নিশ্চয়ই রাতে হোটেলে ফিরে এ জন্য হাত কামড়াবেনই।
মোহনবাগান জনতার জন্য ভাল খবর-- এন পি প্রদীপ ফর্মে ফিরছেন। বহু দিন পর তাঁকে ভাল খেলতে দেখা গেল। বল ছিনিয়ে নেওয়া থেকে পাস বাড়ানোরাকেশ মাসির সঙ্গে জুটি বেঁধে বিরতির আগে পর্যন্ত দখল করে রেখেছিলেন মাঝমাঠ। জুয়েল-মনীশ-স্নেহাশিসও ওই সময়ে রাজত্ব করছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ গোল আসেনি।
বৃহস্পতিবার চিডি-সুয়েকাদের বিরুদ্ধে হয়তো দলে ফিরবেন ব্যারেটো। গোয়ার আর এক ক্লাবের বিরুদ্ধে মোহনবাগান জয়ে ফিরবে কি না সেটাই এখন দেখার।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, আনোয়ার, কিংশুক, নবি, রাকেশ, মনীশ (ধনরাজন), প্রদীপ (সৌভিক), জুয়েল, স্নেহাশিস, ওডাফা। |