রাজ্য পরিবহণ নিগমের লোকসানের বোঝা ও সরকারি ভর্তুকি কমিয়ে আনতে ‘রুট’ বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে ত্রিপুরার বাম সরকার।
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে জানিয়েছেন, “আপাতত চারটি রুটে এই বেসরকারিকরণ করা হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে বাস সমেত রুটগুলি বেসরকারি সংস্থা বা মালিকানার হাতে তুলে দেওয়া হবে।” তার বিনিময়ে ত্রিপুরা রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (টিআরটিসি) বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বছরে বছরে ‘প্রিমিয়াম’ হিসেবে পাবে। বাস চালানোর যাবতীয় খরচ-খরচা সংশ্লিষ্ট বেসরকারি মালিককেই বহন করতে হবে। রুট-বেসরকারিকরণের প্রাথমিক পর্ব সফল হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া আরও সম্প্রসারিত করা হবে।
টিআরটিসি, বহু দিন ধরেই সরকারি এই পরিবহণ সংস্থাটি ক্রমাগত লোকসানে চলছে। সংস্থাটি প্রায় ছ’ শো কর্মী নিয়ে ৪০-৪৫টি বাস বিভিন্ন রুটে চালায়। সম্প্রতি বিভিন্ন রুটে বাস চালানোর জন্য চালকের অভাব দেখা দেওয়ায় টিআরটিসি কর্তৃপক্ষ চালক পদে কিছু নতুন নিয়োগের জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতরকে অনুরোধ করে। লোকসানে চলা সংস্থার জন্য রাজ্য সরকার নতুন কর্মী এখন নিয়োগ করতে অপরাগ, এ কথা টিআরটিসিকে পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। বলেন, এখন টিআরটিসি কর্মীদের বেতনের প্রয়োজন ১২ কোটি টাকা। সব টাকাই রাজ্য কোষাগার থেকে দিতে হয়। মানিকবাবু বলেন, “যাতে লোকসান না বাড়ে তা সরকারকে দেখতে হবে। পাশাপাশি, রাজ্যবাসীর ‘পরিবহণ সমস্যা’ না-কমলেও তা যাতে আরও না বাড়ে তাও দেখতে হবে। তাই টিআরটিসির কয়েকটি রুটের বাস চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি মালিক বা সংস্থার হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পরিবহণ মন্ত্রী জানান, চারটি রুটে বেসরকারি মালিক বা সংস্থার হাত ধরে বাস চালানোর জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এ সব রুটে যাত্রী পরিষেবা বজায় রাখার জন্য সরকারের কোনও খরচ হবে না। অথচ বাসের মালিকানা সরকারের হাতেই থাকবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট রুটে বাসগুলি চালানোর অধিকার পাবে বেসরকারি মালিকরা। এই ব্যবস্থা যদি ঠিকঠাক চলে তবে বাকি রুটগুলির ক্ষেত্রেও রাজ্য পরিবহণ দফতর একই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে টিআরটিসি-র পরিচালন খরচও কমবে। ভবিষ্যতে সেখানে নতুন কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, টিআরটিসি-র বর্তমান কর্মীদের অনেকেই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে অবসর গ্রহণ করবেন। সব কর্মী অবসর গ্রহণ করলে সংস্থাটির সার্বিক পরিচালন ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতেও রাজের আর অসুবিধা হবে না। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ‘আউট সোর্সিং’ করেই রাজ্য সরকারের পরিবহণ সংস্থাটিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেওয়া হবে। |