শরিকদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। বেঁকে বসছে সমর্থক দলগুলি। এই অবস্থায় ভবিষ্যতে সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে খুশি করার পথে হাঁটলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। প্রসঙ্গ, কুড়ানকুলামের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র।
আজ মস্কো থেকে দেশে ফেরার পথে মনমোহন সাংবাদিকদের বলেন, “১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই চুল্লিগুলি নির্মাণ করা হচ্ছে। যা থেকে দু’হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। ঠিক হয়েছে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক পাবে তামিলনাড়ু। আর বাকি বিদ্যুৎ পাবে দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলি।” এর আগে ঠিক হয়েছিল, উৎপাদিত বিদ্যুতের ত্রিশ শতাংশ তামিলনাড়ু পাবে। প্রধামন্ত্রী বলেন, “জয়ললিতা একটি চিঠি দিয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিলেন যাতে তাঁর রাজ্য আরও বেশি বিদ্যুৎ পায়।” সেই দাবি মেনে তামিলনাড়ু যাতে অতিরিক্ত একশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায় তার জন্য ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কুড়ানকুলামের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এখন আন্দোলন চলছে তামিলনাড়ুতে। প্রধানমন্ত্রীর আশা, শেষ পর্যন্ত ‘শুভবুদ্ধিরই জয় হবে’। তাঁর কথায়, “রাজনীতি কখনও কখনও হতাশাজনক সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়। তবে আমি জানি শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধিরই জয় হবে। এবং এ ক্ষেত্রেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ১৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। যারা তামিলনাড়ু সরকার ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে।” জয়ললিতাও আজ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, কুড়ানকুলাম প্রকল্প চালু করার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা দূর করা হোক।
হরিপুর যখন বিশ বাঁও জলে, তখন কুড়ানকুলাম চালু করার একটা বাধ্যবাধকতা কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে। সেটা এক দিকে যেমন দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ-চাহিদা মেটানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে, তেমনই রাশিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ থেকেও। সেই কারণেই তামিলনাড়ুকে বাড়তি বিদ্যুৎ দেওয়ার আশ্বাসে জয়ললিতার মন জয়ের চেষ্টা করেছেন মনমোহন।
তবে একই সঙ্গে এর পিছনে অন্য রাজনীতিও দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে পেট্রোপণ্যের দাম একের পর এক বিষয়ে সমর্থক-সহযোগীদের সঙ্গে মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়ছে মনমোহন সিংহের সরকার। সেই কারণে জয়ললিতার মন জুগিয়ে প্রয়োজনে তাঁকে কাছে পাওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
ঠিক যে কারণে অতি সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের জাঠ কৃষক নেতা অজিত সিংহের সঙ্গে গাঁঠছড়া বেঁধেছে কংগ্রেস। আগামিকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে অজিতের শপথ নেওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “মন্ত্রিসভায় কারও যোগ দেওয়া বা রদবদলের কোনও সুনির্দিষ্ট বিধি নেই। যখন যে রকম পরিস্থিতি হয়, তখন সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।” আর শরিকদের সঙ্গে বিরোধ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “সংসদে কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তার ফলে শরিকদের মতামত শুনেই আমাদের চলতে হবে। তবে শরিকদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করে সংস্কারের প্রশ্নে আরও গতি আনতে পারব বলে আমি আশাবাদী। আমি নিশ্চিত যে শিল্পপতিরাও জোট রাজনীতির এই বাধ্যবাধকতা বুঝতে পারছেন।” খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে মস্কো যাত্রার আগে যে মন্তব্য করেছিলেন, আজ তার পুনরাবৃত্তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। এই ভোট পর্ব মিটে গেলে এই বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে, তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে।” |