ঢালাও শংসাপত্র বদলে গেল সতর্কতায়। তিন মাসেই পরিবর্তন! গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক থেকে ফেরার পথে পি চিদম্বরমকে খোলা গলায় সমর্থন জানিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। উল্টে আরও বেড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন অভিযোগও। এই অবস্থায় আজ মস্কো থেকে দেশে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সামনে কিন্তু চিদম্বরম-প্রশ্নে অনেক সতর্কতার সঙ্গে পা ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। সরাসরি তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এলেন না।
টু-জি নিয়ে চিদম্বরমকে দায়ী করে অর্থ মন্ত্রকের নোট সত্ত্বেও গত বার মনমোহন যে ভাবে তাঁর প্রতি ‘গভীর আস্থা’র কথা জানিয়েছিলেন, তাতে শুধু বিরোধী শিবির নয়, প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কংগ্রেসের অন্দরেও। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সেই ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এবং সংসদ চলার কারণে এ বার গোটা বিতর্ক থেকে কিছুটা দূরেই থাকতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণে আজ নিজে সরাসরি কোনও মন্তব্য না-করে চিদম্বরমের বিবৃতিকেই ঢাল হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীবলেন, “মস্কো যাওয়ার ঠিক মুখে আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হই। সংবাদপত্রে খবরটি দেখেছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন তা-ও পড়েছি। কিন্তু ওঁর সঙ্গে এখনও কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিটি যে কেউ দেখতে পারেন। তাতে তিনি বলেছেন, যে ভাবে তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে তা ঠিক নয়।” গত বার কিন্তু বিদেশ সফরের মাঝেই চিদম্বরমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মনমোহন। এ বার ‘দূরত্ব বজায় রাখার’ স্বার্থেই আর সে পথে হাঁটেননি বলে ব্যাখ্যা সরকারি মহলের। |
বস্তুত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের পুরনো মক্কেলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের যে অভিযোগ চিদম্বরমের বিরুদ্ধে উঠেছে, তা থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেসই। এই প্রশ্নে আত্মপক্ষ সমর্থনের দায় তারা চিদম্বরমের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু টু-জি বিতর্কটা সম্পূর্ণ আলাদা বলেই কংগ্রেস সূত্রের অভিমত। দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, এই বিতর্কে চিদম্বরমের বিপাকে পড়ার অর্থ কার্যত কংগ্রেস তথা সরকারেরই বিপাকে পড়া। কেন না, চিদম্বরমকে উপলক্ষ করে সুকৌশলে প্রধানমন্ত্রীকেই আক্রমণের নিশানা করতে চাইছেন বিরোধীরা। ফলে চিদম্বরমকে সরানোর দাবি যতই প্রবল হোক, তাঁকে সমর্থনের একটা দায় সরকারের থেকেই যাচ্ছে। যদিও টু-জি বিতর্কে চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে আজ কোনও মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী।
আজ আদালতেও টু-জি কেলেঙ্কারিতে চিদম্বরমের জড়িত থাকার বিষয়টির মীমাংসা হয়নি। জনতা পার্টির নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এই অভিযোগ এনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে মামলা দায়ের করছেন। আদালত আজ জানিয়েছে জানুয়ারি মাসে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হবে। তার আগে অভিযোগের পক্ষে আরও প্রমাণ দিতে স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বিচারক ও পি সাইনির আদালতে স্বামী যে অভিযোগ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে ২০০৩ সালের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার সঙ্গে মিলে স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমই। ২০০৮ সালে তাঁরা দু’জনে মিলেই ২০০১ সালের পুরনো দামে স্পেকট্রাম বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ বছর রাজ্যসভায় এ কথা জানিয়েছেন। স্পেকট্রাম বণ্টনের আগে রাজা ও চিদম্বরমের চারটি বৈঠক হয়েছে। যাবতীয় সিদ্ধান্ত রাজা নিয়েছেন চিদম্বরমের নির্দেশেই। ফলে শুধু রাজাকে দায়ী করা যায় না। স্বামীর আর্জি, ফলে এ রাজার সঙ্গে চিদম্বরমকেও সহ-অভিযুক্ত করা হোক। আজ শুনানির পর তিনি বলেন, “বিচারক ৭ জানুয়ারি আরও তথ্য প্রমাণ চেয়েছেন। সেগুলি দিলে সরাসরি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে শুনানিও শুরু হতে পারে।”
তবে শুনানি জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়াটাই কংগ্রেসের একমাত্র স্বস্তির বিষয়। কারণ, সে সময় সংসদের অধিবেশন চলবে না। অধিবেশন চলাকালীন আদালত চিদম্বরমের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ করলেই বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে তাঁর অপসারণের দাবিতে সরব হত। যেমনটি হয়েছিল শশী তারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার সময়ে। বিজেপি শিবির এ জন্য কিছুটা হতাশ হলেও পরবর্তী শুনানির দিকেই চেয়ে আছে তারা। তবে চিদম্বরমের অপসারণের দাবি থেকে তারা সরছে না। দলের নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “চিদম্বরম দোষী। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে এক মুহূর্তও তাঁর থাকা উচিত নয়। নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থেই তাঁর পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত।” প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ দিন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |