কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক কেমন, নম্বর দিয়ে বিচার করবে ছাত্রছাত্রীরাই
রীক্ষায় যাদের ‘ভাগ্য’ নির্ধারণ করেন শিক্ষক, সেই পড়ুয়াদের মূল্যায়নে তাঁরা কত নম্বর পান এ বার তা দেখতে চায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী শিক্ষাবর্ষেই ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়ন চালু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠানে এ ভাবে শিক্ষকদের মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু আছে। দেশেরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রীতি প্রচলিত। তবে এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে ওই পদ্ধতি তেমন ভাবে গৃহীত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বেশ কয়েক বছর আগে পড়ুয়াদের দিয়ে শিক্ষকের মূল্যায়ন করার সুপারিশ করেছিল। ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (নাক) এর জন্য প্রশ্নমালাও তৈরি করেছে। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তার পরে নাক-এর প্রশ্নমালা সব বিভাগের প্রধানকে দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিটিতে আলোচনা করে ওই প্রশ্নমালা সম্বন্ধে মতামত জানাবেন তাঁরা। যদিও অধিকাংশ বিভাগেই এখনও এই ব্যাপারে আলোচনা হয়নি।
তবে শিক্ষকদের মধ্যে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু শিক্ষক মনে করছেন, ছাত্রছাত্রীদের মতামত নিলে পড়ানোর প্রতি শিক্ষকের দায়বদ্ধতা বাড়বে। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান চিন্ময় গুহ বলেন, “আমি এই ব্যবস্থার পক্ষে। শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা বাড়াতে এই মূল্যায়ন জরুরি।” শিক্ষকদের অন্য একটি অংশ আবার এই মূল্যায়নে খুব উৎসাহী নন। যেমন, ইতিহাসের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “যে প্রশ্নাবলি দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে মূল্যায়নকারী ছাত্রছাত্রীদের সবাই খুব মনোযোগী। কিন্তু ক্লাসে নানা ধরনের পড়ুয়া থাকে। সকলের মানসিকতা বিচার করে প্রশ্ন করা দরকার।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই পদ্ধতি চালু করতে চাইছেন। এতে নাক-এর মূল্যায়নে ভাল ‘গ্রেড’ পেতে সুবিধা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মতামত পেয়ে আলোচনার পরে আগামী শিক্ষাবর্ষেই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার ইচ্ছে রয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক কর্তার কথায়, “একে শিক্ষকদের পরীক্ষা হিসেবে দেখার কারণ নেই। পড়ুয়ারা তাঁর সম্বন্ধে কী ভাবছে, সেটা জানতে পারলে শিক্ষক প্রয়োজনে পড়ানোর ধরন বদলাবেন।” উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “এ ভাবে শিক্ষকের ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের মতামত জানা যাবে। তবে শুধু পড়ুয়াদের নয়, তাদের সম্বন্ধে শিক্ষকদের মতও জানা হবে।” এই পদ্ধতি চালু করার তাঁরা আগে ছাত্র ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান উপাচার্য।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসু জানিয়েছেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মূল্যায়ন রীতি চালু রয়েছে। শিক্ষকের পদোন্নতি, এমনকী তিনি কত দিন শিক্ষকতা করতে পারবেন, তা-ও অনেকাংশে নির্ভর করে এই মূল্যায়নে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক
বিভাগেই নিয়মিত শিক্ষকদের মূল্যায়ন করেন ছাত্রছাত্রীরা। এই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোথাও কোথাও এই ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা নিয়মিত নয়। বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগে এটি চালু হয়েও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানকার ইংরেজি বিভাগের এক প্রাক্তন প্রধান বলেন, “মূল্যায়নের জন্য প্রশ্নাবলি তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তেমন আগ্রহ না দেখানোয় পদ্ধতিটি বন্ধ হয়ে যায়।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য নিয়মিত মূল্যায়ন চালিয়ে যেতে চাইছে।

কোন প্রশ্নে মতামত
• ক্লাসে পড়ানোর জন্য শিক্ষকের প্রস্তুতি
• দায়বদ্ধতা
• পাঠ্যক্রমের কতটা ক্লাসে পড়ানো হয়েছে
• পরীক্ষার খাতা দেখায় স্বচ্ছতা
• ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ
• তত্ত্বের প্রায়োগিক দিক কতটা বোঝান
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.