লটারি না-করে সরাসরি পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নিতে হবে, এই দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই অভিভাবকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। শনিবার সেই বিক্ষোভই হাতাহাতির আকার নেয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজেন মণ্ডলের অফিস-ঘরে ঢুকে তাঁকে মারধর করেন। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। ভাঙা চেয়ার ছুড়ে মারা হয় অন্য শিক্ষকদেরও। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, অভিভাবকদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও ছিলেন যাঁদের সঙ্গে স্কুলের কোনও সম্পর্ক নেই। গোলমাল থামাতে গিয়ে ওই বহিরাগতদের মারেই দুই শিক্ষিকা এবং তিন-চার জন ছাত্র অল্পবিস্তর জখম হন।
এ দিনের গোলমালে জড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলের স্থানীয় দুই কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত এবং অনিতা কর মজুমদারের নাম। কিন্তু কেন তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন? জবাবে কলকাতা পুরসভার ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপনবাবু বলেন, “বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে আমি রাজেনবাবুর সঙ্গে আলোচনা করে গোলমাল মেটাতে গিয়েছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, স্কুলের এক শিক্ষাকর্মী ‘যা তোর দিদিকে ডেকে নিয়ে আয়’ বলে হুমকি দেন আমাদের। আর ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতাদেবীর বক্তব্য, “অভিভাককেরা শুক্রবার অরূপবাবুর কাছে গিয়েছিলেন। উনিই আমাদের গোলমাল মেটাতে স্কুলে যেতে বলেন।” তাঁর অভিযোগ, “রাজেনবাবু আমাদের কথা তো শুনলেনই না, উল্টে অফিস ঘরে হাজির থাকা লোকজনকে দিয়ে অপমান করালেন।” |
ওই এলাকার বিধায়ক অবশ্য অরূপ বিশ্বাস নন, দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি কী বলছেন? এ দিন রাতে মন্ত্রী বলেন, “যাদবপুর বিদ্যাপীঠের কয়েক জন অভিভাবক আমার কাছে আসেন। তাঁদের দাবি লিখিত ভাবে স্কুলকে দিতে বলি। না নিতে চাইলে ডাকযোগে পাঠাতে বলি।” একই কথা বলেন অরূপবাবুও। তাঁর বক্তব্য, “বাচ্চাদের নিয়ে কিছু অভিভাবক আমার কাছে আসেন। তপনবাবু বর্ষীয়ান কাউন্সিলর, তাই তাঁকে বিষয়টি দেখতে বলি।” এ দিনের ঘটনার জন্য স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল তৃণমূল সমর্থকদেরই দায়ী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এক দল তৃণমূল সমর্থকের প্ররোচনাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।”
বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের দাবি, তাঁরা স্কুলশিক্ষা দফতরে যোগাযোগ করেছিলেন। দফতর নির্দেশ জারি করে, পরিচালন সমিতি পৃথক হলেও একই বাড়িতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগ থাকলে চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রেরা সরাসরি ভর্তি হতে পারবে।
সেই নির্দেশ মানতে রাজি নয় বিদ্যাপীঠের পরিচালন কমিটি। ওই কমিটির সদস্য সুশান্ত গুপ্ত এ দিন বলেন, “স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশ পেয়েছি। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোনও নির্দেশ নেই। তাদের নির্দেশই মেনে চলি। সচিবের নির্দেশ মানব না।”
স্কুল কর্তৃপক্ষের এই মনোভাবের প্রেক্ষিতে স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন বলেন, “স্কুল ম্যানেজমেন্ট রুল অনুযায়ী সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলকে রাজ্য নির্দেশ দিতেই পারে। স্কুল তা মানতে বাধ্য।” তিনি জানান, এ দিনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করছেন ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্কুলে গোলমাল বাধাল কারা? কারাই বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের জামার কলার ধরে টানাটানি করল? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, কাউন্সিলরেরা ‘অপমানিত’ হয়েছেন শুনে তাঁদের সমর্থকেরা ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান ও শিক্ষকদের নিগ্রহ করেন। কলকাতা পুলিশের সাউথ সুবার্বান ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার বিশ্বরূপ ঘোষ বলেছেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে।” রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি। |