মা-ঠাকুমার হেঁশেল নয়। ব্যস্ত শহরের মধ্যিখানে ভিড়ে ঠাসা মেলা প্রাঙ্গণ। শীতের দুপুর তাতেই মাত।
আপাতত নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই কাটোয়ার শহরের আদর্শপল্লির বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। চলবে রবিবার পর্যন্ত। |
মেলায় বিকিকিনি। নিজস্ব চিত্র। |
দিন-রাত এক করে নানা ধরনের বিনা পারিশ্রমিকে পিঠে তৈরি করে চলেছেন এলাকার ছয় পরিবারের মহিলারা। আর সেগুলি নিয়েই মেলায় সাজানো হচ্ছে পিঠের পসরা। স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ শুক্লা দেবনাথ, অচলা দেবনাথরা বললেন, “পাড়ার ছেলেরা এই মেলা করছে। ওরা পিঠে তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে যায়। আর আমরা পিঠে তৈরি করে স্টলে দিয়ে আসি। এর জন্য পারিশ্রমিক নেব কেন?”
গত বছর থেকে ‘রাঙামাটি উত্তরণ ও স্পন্দন’ নামে কমিটি গড়ে আদর্শপল্লি স্কুলের মাঠে এই মেলা শুরু করেন বাসিন্দারা। মেলার মূল আকর্ষণ পিঠে-পুলি হলেও অন্যান্য মেলার মতোই বসেছে নাগরদোল্লা। হরেক রকম সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকছে। প্রতিদিন আট-দশ রকমের পিঠে পাওয়া যাচ্ছে এই মেলায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পাটিসাপটা, চিড়ে পিঠে, ক্ষীর পিঠে, সেদ্ধ পিঠে, ভাজা পিঠে প্রভৃতি। উদ্যোক্তাদের পক্ষে সজল সেন বলেন, “পাটিসাপটার চাহিদা সবথেকে বেশি।তবে পিঠে-মেলা করতে গিয়ে আমরা লোকসানের মুখে পড়ছি।” |
কাটোয়ার আদর্শপল্লি স্কুলের মাঠে চলছে পিঠে-পুলি মেলা। ছবি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |
উদ্যোক্তারা জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও আদর্শপল্লি এলাকায় পিঠে তৈরির হিড়িক পড়ে যেত। বাড়ি বাড়ি পিঠে বিলি করা হত। এখন আর অবশ্য সে সব নেই। এখন আর শহরে কোথাও পিঠে তৈরি হয় না বললেই চলে। প্রতাপ ঘোষ, শৈলেন পাঠকদের কথায়, “পিৎজা-পেস্ট্রির চাপে এখন পিঠে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এ রকম মেলা করার কথা ভাবি। পাড়ার লোকজনের উৎসাহেই এই মেলার শুরু।” তাঁরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দু’ঘণ্টার মধ্যেই ৮-১০ কিলোগ্রাম চালের পিঠে-পাটিসাপটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
পিঠে খেতে আদর্শপল্লির মাঠে ভিড় জমাচ্ছেন কলেজ পড়ুয়া থেকে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, “মেলায় এসে পিঠের নতুন নতুন স্বাদ পেলাম।”
নতুন, কিন্তু চিরচেনাও বটে। |