|
বোতলেই বিপদ |
সিদ্ধপুরই শিল্পাঞ্চলের ‘সংগ্রামপুর’
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • রানিগঞ্জ |
|
রামের ‘নিপ’ (১৮০ মিলিলিটার) দোকানে ৭৫-৮০ টাকা, নকল বানাতে খরচ পড়ে ২০ টাকারও কম। হুইস্কি বা ভদকার ‘নিপ’ বানাতে পড়ে ২৫ টাকারও কম। বাজারদর অবশ্যই রামের চেয়ে বেশি। ৭৫ টাকা বোতলের বিয়ারের নকল বানাতে ১২-১৪ টাকা। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে হুহু করে বাড়ছে এই সব জাল মদের রমরমা। বহু সময়েই সরাসরি দোকান থেকে আসলের দামে বিক্রি হচ্ছে এই সব মদ। কখনও আবার ‘টানা’ বা ‘চোরাই মাল’ হিসেবে কম দামে বিক্রি হচ্ছে গোপন আস্তানা থেকে।
আবগারি দফতরের কাছে খবর, বাঁকুড়ার মেজিয়া দিয়ে স্পিরিট ঢুকছে শিল্পাঞ্চলে। তাতে গন্ধ-বর্ণ মিশিয়ে হুবহু আসলের মতো দেখতে বোতলে ঢুকিয়ে তৈরি হচ্ছে নকল রাম, হুইস্কি, ভদকা, বিয়ার। অল্প পরিমাণে বার্নিশ করার ওডি স্পিরিটও মেশানো হচ্ছে। তার পর পাঠানো হচ্ছে ‘সাপ্লাই’।
গোটা আসানসোল-দুর্গাপুর জুড়েই জাল কারবারের রমরমা। জামুড়িয়ার নিঘায় বুদ্ধ কলোনিতে একটি বাড়িতে যে দেশি ও জাল বিদেশি মদ বানানো হয় তা পুলিশ থেকে নেতা সকলেই জানে। আসানসোলে রেলপাড় ও কালিপাহাড়ি, কুলটির সীতারামপুর, হিরাপুরের নরসিংহবাঁধ, বারাবনির রাঙাশালায় চলছে জাল মদ তৈরির কারবার। নরসিংহবাঁধের এক বাড়িতে ইতিমধ্যে দু’বার হানাও দিয়েছে আবগারি দফতরের দল। কিন্তু তাতেও কারবার বন্ধ হয়নি।
গত বেশ কয়েক মাস ধরে জাল মদ ধরতে একের পর এক অভিযান চালিয়েছে আবগারি দফতর। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, বেশির ভাগ সময়েই কারবারের মালিক ধরা পড়ে না। ধরা পড়লেও অল্প দিনেই জামিন পেয়ে যায়। ফলে কারবার চলতেই থাকে।
জাল মদের পাশাপাশি অবাধে চলছে চোলাইয়ের কারবারও। কাঁকসা থেকে চিত্তরঞ্জন পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে তার শিকড়। পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ায় সাইকেলে চোলাই তৈরির গুড় আসে বীরভূমের পলপাই ভবানীগঞ্জ থেকে। ঝাড়খণ্ড থেকেও ঢোকে বেশ কিছু এলাকায়। তা দিয়েই গোটা এলাকায় চোলাই হয়। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের ‘সংগ্রামপুর’ যদি বলতে হয়, সে হল জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর। সেখান থেকেই জ্যারিকেন বোঝাই চোলাই নানা জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাকরের মোহন ধাওড়া, দেবু ধাওড়া, মাঝিপাড়া এলাকা, রানিগঞ্জের বাঁশতলা, নেপালিপাড়া, দুসাদপাড়া, বনমালীপাড়া, জামুড়িয়ায় চকতুলসী, দেশের মহান, বাগডিহা, লোদা, গোবিন্দপুর, শেখপুর, ভাড্ডা, তালতোড়, সত্তর, ডোবরানা, চিচুরিয়া এলাকায় ঢালাও চোলাই তৈরি হয়। পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি, কেন্দ্রা, ভুরি, ফরফরে, ছত্রিশ গন্ডাও পিছিয়ে নেই। কাঁকসার মলানদিঘি, দোমরা, তিলকচন্দ্রপুর ও বারাবনির ভানোড়া, মাঝিপাড়া, সাহেবপাড়াতেও প্রকাশ্যে চোলাই তৈরি এবং বিক্রি চলে।
শুক্রবারও কাঁকসার ওই তিন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৫০ লিটার চোলাই ধরেছেন আবগারি দফতরের কর্মীরা। বারাবনির এই তিন এলাকা থেকে ৫০০ লিটার চোলাই তৈরির উপকরণ ও ২০ বোতল চোলাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আসানসোল আবগারি দফতরের সুজিতকুমার দাসের দাবি, জাল মদ ধরতে তাঁরা প্রতি মাসেই অভিযান চালান। চোলাই ধরতেও অভিযান হচ্ছে। তাঁর মতে, “এই এলাকায় চোলাই সাধারণত নিজেরা বাড়িতে খাওয়ার জন্যই বানানো হয়। তবে তা-ও বন্ধ করতে অভিযান হচ্ছে।”
ফলেন পরিচিয়তে... |