ইঞ্জিনের পথ আটকে বাজার, রুটিন আশ্বাস সম্বল পুরসভার |
রাস্তা ২২ ফুটের। কিন্তু তা শুধু পুরসভার খাতায়।
বহরে কমে সেই রাস্তা এখন ১৪ ফুট। বাকিটা হকার আর আশপাশের দোকান মালিকদের দখলে। হাটন রোড থেকে বাঁ হাতে বস্তিন বাজার অঞ্চলের চেহারাটা এখন এমনই।
আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে বস্তিন বাজার রোড। ১৬ ফুট রাস্তার প্রায় সবটাই গিলে খেয়েছেন এলাকার দোকান মালিকেরা। রাস্তা এখন কার্যত সাত ফুটের একটি গলি। রাস্তা দখল করে রাখা আছে দোকানের সামগ্রী। এই তালিকায় রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার-সহ বহু দাহ্য সামগ্রী-ও।
এখানেই শেষ নয়। সামনের ফুটপাথ জুড়ে প্রচুর পলিথিনের অস্থায়ী ছাউনি টাঙিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন একদল ব্যবসায়ী। বিক্রি হচ্ছে সব্জি, মাছ। ছাউনিগুলির ঠিক মাথার উপরেই মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুৎ আর জেনারেটরের তার। মুন্সি বাজার এলাকায় এই দৃশ্য আরও ভয়াবহ। এক বার শর্ট সার্কিট হলে আগুন গিয়ে পড়বে পলিথিনের উপরে। দমকলের ওসি সেলিম জাভেদের আশঙ্কা, বাজার এলাকা ভস্মীভূত হয়ে যাবে নিমেষে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মূল বাজার এলাকায় রাস্তার ঠিক উপরে একাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। দমকলের গাড়ি ঢোকার পথে এগুলি অন্তরায়। তিনি বলেন, “পলিথিনের ছাউনি, খুঁটি সরিয়ে নিতে পুরসভাকে আমরা বার বার অনুরোধ করেছি।” |
কিন্তু পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে সরাসরি অভিযোগ দমকলের। ফলে আগুন লাগলে এলাকায় ঢুকতে পারছে না ইঞ্জিন।
বছর দুই আগে মুন্সী বাজারের কাছে মাঝ রাতে আগুন লাগে। দু’টি গুদাম ভস্মীভূত হয়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা শোনালেন স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ শর্মা, সোমনাথ কেডিয়ারা। তাঁদের আশঙ্কা, “অবস্থার পরিবর্তন না হলে যে কোনও দিন পরিবার সমেত পুড়ে ছাই হয়ে যাব।”
শুধু বাজার এলাকা নয়।
আসানসোলে প্রায় হাজার দু’য়েক বহুতল। এক ডজনের কাছাকাছি শপিং মল। প্রতি দিন সেখানে কয়েকশো মানুষের যাতায়াত। সেলিম জাভেদের দাবি, “এদের অধিকাংশেরই ফায়ার লাইসেন্স নেই। একটিরও ফায়ার অ্যালার্ম নেই। নেই আপতকালীন সিঁড়ি। পাইপলাইন নেই, জলাধার নেই।” অথচ পুরসভা থেকে ব্যবসা করার অনুমতি পেয়েছেন তাঁরা।
দমকলের ছাড়পত্র না থাকলে তো পুরসভার অনুমতি পাওয়ার কথা নয়। ওসি-র দাবি, “আমি এ কথা অনেক বারই পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয় না।” মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “আর কোনও গাফিলতি থাকবে না। এ বার নিয়ম নীতি ভাল ভাবেই মেনে চলা হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই অবশ্য দাবি, “পলিথিন সরানো বা হকার উচ্ছেদ, কোনও দিনই কার্যকর হবে না। কারণ, এতে তো ভোট ব্যাঙ্ক নষ্ট হবে।”
তাপসবাবু অবশ্য বাসিন্দাদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমরা নজর রাখছি। দ্রুত পলিথিন সরানো হবে।”
দমকলের পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পুরসভাকেও এলাকার সার্বিক উন্নতি ঘটাতে হবে। এখন দেখার, দমকল ও পুরসভার মেলবন্ধন কতটা কার্যকর হয়। |