কেউ মদ খেয়ে মারা গিয়েছেন। কেউ আবার চোখে ঝাপসা দেখেন।
কেউই মগরাহাটের চোলাই খাননি। খেয়েছিলেন সেই ২০০৭ সালে। বালুরঘাটের এক লাইসেন্সপ্রাপ্ত পানশালায়। মৃতের আত্মীয় এবং মদে অসুস্থসবাই ‘আশায় বুক বাঁধছেন।’ মুখ্যমন্ত্রী ‘সহানুভূতি’ দেখিয়ে নিশ্চয় ক্ষতিপূরণ দেবেন। হোক না, চার বছর আগের ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো আড়ালে আঁতকেই উঠবেন, অচিরেই তাঁর কাছে ক্ষতিপূরণের লিখিত আর্জি পৌঁছচ্ছে। ইতিহাসের চাকা যদি পিছনে গড়াতেই থাকে, তা হলে পরিস্থিতি চোলাইয়ের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
তখন বাম আমল। ওই পানশালায় ভেজাল মদ খেয়ে ৮ জন মারা যান। অসুস্থ হন জনা কুড়ি। কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। রেওয়াজও ছিল না। অভিযোগ, এমনকী বামেদের সহানুভূতিও মেলেনি। পুলিশ ওই পানশালার দুই মালিককে গ্রেফতার করে। সেই মামলার আজও নিষ্পত্তি হয়নি। |
বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার ময়ামারি গ্রামের বাসিন্দা সুবীর দত্ত ভেজাল মদে মারা যান। শুক্রবার তাঁর দাদা বাদলবাবু বলেন, “বামেদের আমলের কারও সহানুভূতি পাইনি। মামলাও ঝুলে রয়েছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যেমন কড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন, তাতে এ বার হয়তো সুবিচার পাব। আশা করি, উনি আমাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আমরা শীঘ্রই লিখিত আর্জি জানাব। এলাকার তৃণমূল নেতারাও আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।” এক বাম নেতা বলেন, “ওই তৃণমূল নেতা সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবেন।”
ওই পানশালায় মদ খেয়ে মৃত্যু হয় চকভৃগুর যুবক দীপেন ধরের। তাঁর ভগ্নিপতি সমীর তালুকদারের অভিযোগের ভিত্তিতে বালুরঘাট থানা মামলা দায়ের করে। পানশালা থেকে বাজেয়াপ্ত মদের নমুনায় মিথাইল অ্যালকোহল মেলে। মদের নমুনা ও ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরে ২০০৯ সালে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়।
পানশালায় মদ খেয়ে যাঁরা অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজও চোখে কম দেখেন। এমনই এক জন হলেন তন্ময় দাস। তিনি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে বহুদিন চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এখনও চোখের পূর্ণ দৃষ্টি ফিরে পাইনি। তবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছি। ওঁর কাছে সব জানিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইব। আগের সরকার আমাদের বঞ্চিত করেছে। এই সরকার নিশ্চয় ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করবে না।”
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল নেতা দেবাশিস মজুমদার ভেজাল-মদ কাণ্ডে মৃত ও অসুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “বাম সরকার কোনও সাহায্য দেয়নি। আমাদের সরকার কিন্তু বিষমদ-কাণ্ডে মৃত ও অসুস্থদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা চকভৃগুর ভেজাল মদ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই।”
শুক্রবার বালুরঘাট জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী শুভা চাকি জানান, ভেজাল মদের মামলাটি জেলা আদালতে চার্জ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি শুনানি শুরু হওয়ার কথা।
শুনানিতে যাই হোক, ক্ষতিপূরণের দাবি গতি পেতে শুরু করেছে। মদ্যপায়ীদের নিকট আত্মীয়দের কেউ কেউ অতিমাত্রায় আশাবাদী হয়ে উঠছেন। |