সামনেই বড় রাস্তা। কিন্তু থানার সামনে রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে খবর পেয়ে কোনও অভিযানে যেতে গেলে বড় রাস্তায় উঠতেই সময় লেগে যায় বেশ কিছুক্ষণ। অসমান রাস্তায় তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে হোঁটট খাওয়া ছাড়াও মাঝে-মধ্যে রাস্তার পাশে নদীতে কিংবা জমিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনই শোচনীয় অবস্থা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা হেমনগর উপকূলবর্তী থানার সামনের রাস্তার।
সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন নদীতে জলদস্যুদের হামলা ঠেকাতে তৈরি হয়েছে এই উপকূল থানা। কিন্তু ঘটা করে থানার ভবনের উদ্বোধন করা হলেও থানাভববন থেকে হেমনগর চৌমাথা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তার কোনও সংস্কার করা হয়নি। ফলে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশকর্মীদের ওইটুকু রাস্তা পার হতে হয় অতি সন্তর্পণে। দেড় কিলোমিটরর পথ পেরোতে সময় লেগে যায় আধ ঘণ্টা।
মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ থানা থেকে একটা নদী পেরিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে তবেই যেতে হয় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা হেমনগর কিংবা সামসেরনগরে। ওই সব এলাকা থানা থেকে যথেষ্ট দূরবর্তী হওয়ায় অধিকাংশ সময়ে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই দুষ্কৃতীরা লুঠপাট করে পালিয়ে যেত। |
দুষ্কৃতীদের হামলা ঠেকাতে এবং নিরপত্তার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই ওই সব এলাকার মানুষ হেমনগরে একটা থানার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দুষ্কৃতীদের হামলার পাশাপাশি জঙ্গলপথে বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে নদীপথে অস্ত্র পাচার হচ্ছে বলেও বেশ কিছুদিন থেকে প্রশাসনের নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠছিল। এ সব নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনের তরফে শেষ পর্যন্ত হেমনগরে একটা থানা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। গত জুলাই মাসে এই হেমনগর উপকূলবর্তী থানার উদ্বোধন করা হয়। গোমতী নদীর ধারে মাঠের মাঝে দোতলা সুন্দর থানাভবন তৈরি রা হলেও সেখান থেকে কী ভাবে বড় রাস্তায় আসা যাবে সে বিষয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। আগে নদীর পাড় থেকে পিচ রাস্তায় যাওয়ার জন্য সরু ইটের রাস্তা ছিল। ২০০৯ সালে আয়লা সেই রাস্তা ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। শুধু থানার পুলিশকর্মীরাই নন, গ্রামবাসীরাও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। ভাঙা ওই রাস্তার পাশেই হেমনগর হাইস্কুল। চরম বেহাল রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে প্রায়ই আছাড় খেতে হয় ছাত্রছাত্রীদের, এমনকী শিক্ষকদেরও। আয়লার পর বছর দুয়েক কোটে গেলেও রাস্তা আর মেরামত হয়নি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েত-সহ প্রশাসনের সর্বস্তরে জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।
অপরিসর এবং এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার কারণে থানা পর্যন্ত পুলিশের গাড়ি যেতে পারে না। ফলে বড় রাস্তায় গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে কিংবা মোটর সাইকেলে থানায় পৌঁছতে হয় পুলিশকর্মীদের। এমনকী থানার কর্মীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, রান্নার কাঠ, অস্ত্রশস্ত্র সবই মাথায় করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। বেহাল রাস্তার কারণে অনেক সময়েই দুষ্কৃতীদের হামলার খবর পেলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। সাধারণ মানুষও দেরির কারণ বুঝতে না চেয়ে পুলিশকে দোষারোপ করেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাস্তার কারণে হেঁটে থানায় যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। সাইকেল কিংবা মোটর সাইকেলে উঠে অসমান রাস্তায় যেতে গিয়ে অনেককেই নদী কিংবা ধানের খেতে আছাড় খেতে হয়।
ওসি অলকেশ বালা বলেন, “থানাভবন পর্যন্ত গাড়ি না-আসায় আসামীদের ধরে হাঁটিয়ে আনা কিংবা আদালতে নিয়ে যাওয়া বেশ বিপজ্জনক। থানার জন্য জিনিসপত্র আনাও বেশ কষ্টকর। বিশেষ করে রাতবিরেতে জরুরি খবর এলে এই দেড় কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে বড় রাস্তায় গাড়িতে ওঠা বেশ সমস্যার। রাস্তার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় অনেক সময়েই মানুষ আমাদের ভুল বোঝে।’’ তিনি আরও জানান, জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামত এবং গাড়ি চলাচলের উপযোগী করার জন্য পঞ্চায়েত থেকে বিডিও পর্যন্ত জানানো হয়েছে।” যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান মুরারীমোহন মণ্ডল বলেন, “আয়লার পর রাস্তাটি অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। রাস্তা ঠিক না করে হঠাৎই থানাভবনের উদ্বোধন করে দেওয়া হয়। আয়লার পর প্রাথমিক ভাবে রাস্তার কাজ করা হয়েছিল। তবে রাস্তাটি যাতে দ্রুত পাকাপাকি মেরামত হয় সে জন্য বিডিওকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” |