শনিবারের নিবন্ধ
উল্লাস!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হব হব।
বলতে বলতেই ঝুপ। বিকেল শেষ।
এ তো সাঁঝের মরা আলো! নাকি অন্ধকার?
সবুজ লনে বার-বি-কিউয়ের আগুন তখন ধিকিধিকি। পিছনে খোলা আকাশে সূর্যের মরা আলো যখন পালাই পালাই।
শীতকাল এ রকমই। আলো থেকে কখন জানি অন্ধকারে।
এক্কেবারে আচমকা।
প্রেমে পড়ার মতো!
আর সেই আচম্বিতে আসে ভালবাসা। সহজ খুনসুটি।
সেই সন্ধের আড্ডায় যেমন। হায়াত রিজেন্সির ঝিরঝিরে পুলসাইডের প্রশস্ত লনে। এমন আড্ডাতেই তো হামাগুড়ি দিয়ে রোমান্স আসে। শীতের রোমান্সের মৌতাতে জড়সড়ো হয় মন। কখনও শরীরও।
সঙ্গে বার-বি-কিউয়ের ঝলসানো মাংস আর ওয়াইন। গরমের জ্যাবজ্যাবে ঘেমো রোমান্সের চিড়চিড়েমি নয়। কলকাতার হাল্কা শীতে শিরশিরে সোহাগ। যার স্বাদই আলাদা।
“একদম আলাদা,” বলছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। বলতে শুরু করেই আবিরের যেন কবিতা পায়, “রোদ্দুর হেলে যাওয়া দুপুর গড়িয়ে যখন শীতের বিকেল নামে তখন হাত-পা টানছে। ঠোঁট শুকনো। শরীর উষ্ণতা চাইছে। শীতের সন্ধেয় স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে পাতা পড়ার টুকরো আওয়াজটাও। কানে কানে কথা বলার এটাই এক্কেবারে ঠিক সময়। এ সব রোম্যান্টিক ব্যাপার-স্যাপার গরমকালে ঘেমো গায়ে হবে কখনও?”
শীতের আড্ডায় আবিরের প্রিয় পানীয় ওয়াইন। “মাতাল করে না। কিন্তু উষ্ণতা দেয়। তবে আসল উষ্ণতা সে-ই দেবে। তার সেন্স অফ হিউমার দিয়ে। না হলে কথাই বলা যাবে না তো! শীতের রাত লম্বা। তাই ভাল কথা না বলতে পারলে সন্ধে গড়িয়ে রাত হবে কী করে?”
এ দিকে পাশে বসা সুন্দরীটি তখন ভাবছে,“শীতের আড্ডায় পাশের পুরুষটিকে কাছে টানতে ‘লেয়ার্স’-এ ঢেকে আড্ডায় বসতে বেশ লাগে। তার পর রাত যত গড়াবে একটা একটা করে ‘লেয়ার’ সরিয়ে আমার আমিটা বেড়িয়ে আসবে।” সুন্দরীটি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
শীতের উষ্ণতা মনে মেখে নিতে স্বস্তিকার চাই ভাল ওয়াইন আর ভাল খাবার। “আমি পাগলের মতো ওয়াইন ভালবাসি। আর কলকাতার আবহাওয়ায় ওয়াইন ভাল করে খাওয়াই যায় না। শীতের এই ক’টা দিনই যা ভরসা।” ওয়াইনে জমে যাওয়া স্বস্তিকাকে ইমপ্রেস করতে গেলে পুরুষটিকে “ইমপ্রেস করার পাগলের মতো চেষ্টা করাটা বন্ধ করতে হবে। আর তাঁর জীবনে কত দুঃখ, বৌ কত খারাপ এই জাতীয় কান্নাকাটি বন্ধ করতে হবে। জমিয়ে অন্য গল্প করতে জানতে হবে। প্রেমটা সে ভাবেই জমে।”
শুধু স্বস্তিকা? প্রায় সব মেয়েই তো শীতের সন্ধেয় এই রকম সটান পুরুষই চায়। যে ভ্যাদভ্যাদে নয়। যাঁর মধ্যে ঋজুতা আছে। মেদহীন রোমান্সের ইচ্ছে আছে।
কমলিনী যেমন। “শীতের সন্ধেয় আমার বিশেষ পুরুষটি যখন সঙ্গে থাকবে তখন খোলা আকাশের নীচে বার-বি-কিউ আর রোমান্সই একমাত্র ডেস্টিনেশন হতে হবে। খোলা আকাশ, মাংসের পোড়া গন্ধ আমার সব মন খারাপ সারিয়ে দেয়। সঙ্গে খুব ভাল ওয়াইন থাকতে হবে। আর তার পর রোমান্স আসবে ধীর লয়ে। ছোটবেলার গল্পের হাত ধরে। যে গল্প থেকে মানুষটাকে আরও ভাল করে চিনতে পারব।
ফ্লার্ট করার দরকার নেই। আমাকে ইমপ্রেস করতেও হবে না। সে থাকুক তার মতো।
প্রেম আসার হলে এমনিই আসবে।” আর ঝকঝকে স্বাচ্ছন্দে রোমান্সের প্রথম ধাপে পেরোবেন কমলিনী।
আড্ডা আর রোমান্সে স্বাচ্ছন্দ্যকে পাসওয়ার্ড মানছেন সৃজিতও। “তবে বার-বি-কিউ-এর সন্ধেতে আমার চোখ আর মন দুই-ই জুড়ে থাকবে মাংস, চিংড়ি, সসেজ।” হায়াতের সেই সন্ধেয় ছিল আরও কিছু। মটন, পর্ক, বিফআপনার মাংসাশী সত্তার উদার উদ্যাপন। আর প্রেম? পাশে তো ছিলেন দুই সুন্দরীও? “মহিলারা ছিলেন নাকি?” সৃজিতের অবাক প্রশ্ন।
শুধু সেই সন্ধে নয়। শুধু ফ্ল্যাটের মধ্যেও নয়। শহরের নানা হোটেলে খানাপিনার বিশেষ অফার শুরু হয়ে গেছে। হায়াত রিজেন্সিকেই ধরুন না। গোটা শীতকালটা জুড়েই বার-বি-কিউ উৎসব। ক্রিসমাস প্রাঞ্জো। শ্যাম্পেন ডিনার।
আড্ডা। খাওয়া। প্রেম। শীতের সন্ধে। গত এগারো মাসের হিসেব বুঝে নিতে তৈরি?

মাথায় রাখুন
• আইফোনে ফেসটাইম অ্যাপ্লিকেশনটা অন করে রাখুন। আর আইফোন যদি না থাকে, তা হলে ব্ল্যাকবেরি বা অন্য কিছুতে স্কাইপি অ্যাপ্লিকেশনটা। যে বন্ধুরা বিলেত-আমেরিকায় বসে আছেন, তাঁদের সঙ্গেও তা হলে লাইভ আড্ডা মারতে পারবেন। ভিডিও-সহ। আপনারা কী খাচ্ছেন, নিউ ইয়র্কের বন্ধুও সেটা দেখতে পাবেন। চলতে থাকবে ইন্টারন্যাশনাল আড্ডা।
• পার্টির আগে ক্যামেরা আর আইপডের ব্যাটারিতে যেন পুরো চার্জ থাকে। এত রকমের মুহূর্ত তৈরি হবে, সেগুলোকে ক্যামেরায় তুলে ফেসবুকে আপলোড না করলে চলবে! রোজ-রোজ তো আর এই উল্লাসের রাত আসবে না! এই সময় রাতের দিকে হিম পড়ে। এ দিকে খোলা হাওয়ায় আড্ডা। অনেক বন্ধুই হয়তো মাথা ঢাকা দেওয়ার মতো কিছু নিয়ে আসতে ভুলে গেলেন। তাই টুপি জাতীয় কিছু হাতের কাছে রাখুন।
• বাংলা গান এখন দারুণ ভাবে ‘ইন’। সে ‘গভীরে যাও’ই হোক, বা ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’ বা ‘জানি দেখা হবে’। বাংলা ব্যান্ড তো আছেই। বার-বি-কিউ-এর বিলিতি আমেজের সঙ্গে মিলিয়ে দিন বাঙালি শহুরে সুর। আর হ্যাঁ, মিউজিক সিস্টেমটা যেন ভাল হয়। না হলে ‘মুড’টা জমবে না।
• অনেকেরই হার্ড ড্রিংক্সে মাথা ধরার প্রবণতা থাকে। তাই হাতের কাছে প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু ওষুধ আর মাথা ধরার বাম রাখুন।

ঝলসে নিন শীতের আঁচে
লখনউ কিংবা পুরনো দিল্লির ঝলসানো মাংস বা তন্দুরির স্বাদ এ বার মধ্যবিত্ত গেরস্তের মজলিশেও। তাই শীত পার্টির নতুন নেশা এখন বার-বি-কিউ।
ছাদে, উঠোনে বা বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ির চিলতে বারান্দায় উনুন জ্বালিয়ে, তাতে মাংস সেঁকে খানাপিনার মৌতাতে যা যা লাগবে

বার-বি-কিউ উনুনের রকম-সকম

• ব্রিফকেস বার-বি-কিউ
কেমন দেখতে: বড় কোম্পানির ছাপ মারা, এই বার-বি-কিউ উনুন দেখতে ব্রিফকেসের মতো। ভাঁজ করলে ছোট হয়ে যায়। স্ট্যান্ডওয়ালা উনুনের বাক্সটিতে কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে উপরে গ্রিল বা ঝাঁঝরি চাপিয়ে দেওয়া। সঙ্গে থাকছে পাঁচটি করে শিক। কয়লার ছাই পড়বে উনুনের তলার বাক্সটিতে। ঘর নোংরা হওয়ার কোনও কারণ নেই।
দাম: ৪২০০ টাকা
কী ভাবে করবেন: শিকের ভেতর মাংস, মাছ, শাক সব্জি ঢুকিয়ে গ্রিলের ওপর চাপিয়ে দিলে প্রত্যেক বারে দশ টুকরো করে মাংস ঝলসানো যাবে। সময় মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিট। তিন বার গ্রিল করলে দশ জনের পাতে দেওয়ার মতো বার-বি-কিউ হাজির। ইচ্ছে হলে স্ট্যান্ডের উচ্চতাও বদলানো যায়। মাটিতে বা জাজিমে পা ছড়িয়ে বসে আড্ডা হলে বার-বি-কিউটি নামানো যাবে জমিনের স্তরে।

• গ্যাস তন্দুর বার-বি-কিউ
কেমন দেখতে: বড় তেলের ড্রাম বা ব্যারেলের নীচের দিককার টিন কেটে গ্যাসের চুল্লি ঢুকিয়ে দেওয়া। সিলিন্ডারটি থাকবে বাইরে। তারই সঙ্গে জোড়া থাকবে আভেন।
দাম: আড়াই হাজার টাকা। নানা সাইজের স্টিলের শিক বা টং আলাদা কিনতে হয়।
দাম: প্রতিটি ৫০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে।
কী ভাবে সেঁকবেন: এক থেকে দেড় ফুট লম্বা শিকে মাছ বা মাংস ঢুকিয়ে সেঁকে নিন। গনগনে আঁচে মিনিট পাঁচেক ঝলসালেই বাদামি রংয়ের রোস্ট হাতে গরম।

• ইলেকট্রিক বার-বি-কিউ
কেমন দেখতে: বৈদ্যুতিক উনুন। হিটারের মতো। তলায় তারে জ্বলবে বৈদ্যুতিক আগুন। সাইজ নানা ধরনের। বড় শপিং কমপ্লেক্সের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর শো-রুমে পাওয়া যাচ্ছে মেড ইজি বার-বি-কিউ। ছোট ফ্ল্যাটের গেরস্থালিতে কয়লা বা গ্যাস জ্বালিয়ে বার-বি-কিউ না করতে পারার খেদ মেটাতে ইলেকট্রিক বার-বি-কিউয়ের জুড়ি মেলা ভার।
দাম: চার থেকে ১৬ জনের জন্য সেটের খরচ ১৬০০টাকা।
কী ভাবে সেঁকবেন: চুল্লির ওপরে খাঁচার মতো দেখতে যে তাক তাতে রাখতে হবে ম্যারিনেটেড মাছ বা মাংসের টুকরো। শিক লাগে না। মিনিট দশেকের মধ্যে ঝলসে ওঠা মোলায়েম মাংসের টুকরো রেডি।

• কীসের বার-বি-কিউ
মাছ, খাসি, মুর্গি, শুয়োর, ভেড়ার মাংসের বার-বি-কিউ হয়। পনির, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, গাজরও ঝলসে খাওয়া যায় একই ভাবে। ম্যারিনেট করে। মাংস বা মাছের পিসের ওজন পঞ্চাশ থেকে ষাট গ্রামের বেশি হবে না।

কী ভাবে ঘরোয়া বারবিকিউ
বার-বি-কিউয়ে মুরগি ম্যারিনেট করতে মশলা হল, আদা বাটা, রসুন বাটা, শুকনো লঙ্কা বাটা, পাতি লেবুর রস। শিকে মাংস ঢুকিয়ে সেঁকতে হবে। রোস্ট হওয়ার পর তেল মাখাবেন মাংসের গায়ে।
খাসির মাংস বা রেড মিট-এর ওজন হবে ৫০ গ্রাম করে পিস। চর্বির অংশ কেটে বাদ দিলে ঝলসানো মাংস অতিরিক্ত তেলতেলে মনে হবে না। গ্রিলে বা ঝাঁঝরিতে ঝলসাবেন।
শুয়োরের মাংস বা পর্ক ঝলসাতে গন্ধরাজ লেবুর রস, নুন, গোল মরিচগুড়োঁ, রোজমেরি হার্ব ও বার-বি-কিউ সস দিয়ে ম্যারিনেট করলে খুব ভাল খেতে লাগে। রোজমেরি হার্ব ও বার-বি-কিউ সস যে কোনও সুপার মার্কেটেই মিলবে। পর্ক বার-বি-কিউয়ের জন্য মাংস অবশ্যই ঘণ্টা তিনেক ম্যারিনেট করতে হবে।
কাঁটা ছাড়ানো ভেটকি, বড় জাতের পাবদা দিয়ে ভাল বারবিকিউ হয়। ফিলে করা মাছের পিস ম্যারিনেট করা যেতে পারে গন্ধরাজ লেবুর রস, গোলমরিচ, অলিভ অয়েল, সর্ষে বাটা দিয়ে। বার-বি-কিউ হবে গ্রিলে। পুরু ভারী কাতলা মাছের বার-বি-কিউ হতে পারে শিকে।

তথ্য: হায়াত রিজেন্সির মুখ্য রাঁধুনি বিক্রম গাংপুলে

আরও জানুন
• ঘরের মধ্যে বার-বি-কিউ করলে জানলা বা দরজা এক-আধটা খোলা রাখতে হবে।
• কয়লার বা কাঠের আঁচেই ঝলসানো মাংসের আসল মেঠো সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায়।
• বার-বি-কিউয়ের উনুন কী ভাবে ব্যবহার হবে, সাফাই করার উপায় কী, বিক্রেতার কাছে পরিষ্কার জেনে নিন।
• বার-বি-কিউয়ের মাছ মাংস ম্যারিনেট করতে হবে কমসে কম এক ঘণ্টা। সময় হাতে থাকলে তিন-চার ঘণ্টা হলে আরও ভাল।
• কয়লার তাপে বার-বি-কিউ হলে বারান্দা বা ছাদে আঁচ দিয়ে, ধোঁয়া কমিয়ে বার-বি-কিউ উনুন ঘরেও নিয়ে আসা যেতে পারে।

তথ্য: মেনল্যান্ড চায়নার কর্ণধার অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়


স্বস্তিকার স্টাইলিং: অজপা মুখোপাধ্যায় রায়। স্বস্তিকার পোশাক: সায়ন্তন সরকার।
স্বস্তিকা, কমলিনী, সৃজিত আর আবিরের মেক-আপ: নবীন দাস।
কমলিনী, সৃজিত আর আবিরের স্টাইলিং: স্যান্ডি। কমলিনীর গয়না: বাইলুম।
লোকেশন: হায়াত রিজেন্সি, কলকাতা
ছবি: সোমনাথ রায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.