উত্তর কলকাতা
রবীন্দ্র কানন
উদ্যানে অবহেলা
হরের বিভিন্ন পার্কের যখন নতুন করে সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে, তখন উত্তর কলকাতার প্রাচীন বিডন স্কোয়্যার কিংবা রবীন্দ্র কাননের মূল পার্কের সৌন্দর্যায়নের দিকে নজর নেই কারও। প্রাচীন এই পার্ক স্থানীয় মানুষের কাছে কোম্পানি বাগান বা বিডন স্কোয়্যার নামেই বেশি পরিচিত। বঙ্গভঙ্গের সময়ে রবীন্দ্রনাথ এই পার্কে সভা করেছিলেন। বর্তমানে এই পার্কের ভিতর এবং বাইরে সর্বত্রই অবহেলার চিহ্ন।
বাইরে থেকে অবশ্য বোঝা যায় না যে এখানে কোনও পার্ক রয়েছে। কারণ, রবীন্দ্র সরণি এবং দানী ঘোষ সরণির মোড়ে অবস্থিত পার্কটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলের গা ঘেঁষে রয়েছে সারি সারি দোকান। এক দিকে আবার পার্কের পাঁচিল ঘেঁষে আখের ঝাড় পর পর এমন ভাবে সার দিয়ে দাঁড় করানো যে হঠাৎ দেখলে কেউ আখের গুদাম বলে ভুল করতে পারেন।
পার্কের মূল লোহার গেট সারা দিনই খোলা। সেখান দিয়ে সারা দিন ঢুকছেন অসংখ্য ভবঘুরে মানুষজন। পার্কের ভিতরে রয়েছে অনেক মনীষীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। দিনের পর দিন এগুলি অযত্নে পড়ে রয়েছে। ভিতরের অবস্থাও ভাল নয়। পার্কের মাঠে ঘাস বলতে কার্যত কিছু নেই। পুরো মাঠে বালি ভর্তি। সারা দিনই গেট খোলা থাকায় আশপাশের বাসিন্দাদের থেকে ভবঘুরেদের আড্ডা বেশি। ঘুরে বেড়ায় প্রচুর কুকুর। পার্কে বসার জন্য এক সময়ে তৈরি শেডও অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে আবার বসার জায়গায় লোকজন দিনভর শুয়ে রয়েছে। সন্ধে বেলা পার্কের ভিতর আলো এত কম যে পার্কের সব জায়গায় আলো পৌঁছয় না। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, অন্ধকারে পার্ক হয়ে উঠেছে কিছু লোকের নেশা করার জায়গা। সন্ধের পর এখানে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলে। পার্কটি কার্যত উন্মুক্ত শৌচাগারে পরিণত হয়েছে। পথচলতি বহু মানুষ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্যই পার্কে ঢোকেন বলে অভিযোগ।
পার্কের ভিতরে বিখ্যাত মনীষীদের মোট পাঁচটি মূর্তি রয়েছে। মূল গেট থেকে ঢুকেই বাঁ দিকে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। সোজা গেলে রাজা কালীকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের পূর্ণাবয়ব বসা মূর্তি। রয়েছে কবিরাজ দ্বারকানাথ সেন, কবিবর প্রিয়নাথ সেন-সহ সীতানাথ রায় বাহাদুরের মূর্তি। মূর্তিগুলি ধুলোয় ভর্তি। দ্বারকানাথ এবং প্রিয়নাথ সেনের মূর্তির গায়ে লেখা বিবরণ এমন ভাবে উঠে গিয়েছে যে পড়তে পারা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, মাঠটিতে দিনভর বাইরের ছেলেরা বল আর ক্রিকেট খেলায় রীতিমতো বল এসে লাগছে মূর্তির গায়ে।
গত পুরবোর্ডের আমলে পার্কের একাংশে যে জায়গায় শিশুউদ্যান ছিল, সেই অংশে গাছপালা লাগিয়ে আলাদা করে ঘিরে পার্কটি সাজায় কেইআইপি। বসানো হয় নতুন আলো। শিশুউদ্যানটি আলাদা করে ঘিরে দেওয়া ছাড়াও রয়েছেন নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু মূল পার্কে কোনও নিরাপত্তারক্ষী চোখে পড়ে না।
কলকাতার প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক এই পার্কের বেহাল অবস্থার ব্যাপারে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শশী পাঁজা বলেন, “আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এ বছরেই পার্কটি সাজানোর কথা ভেবেছিলাম। পার্কটির সৌন্দর্যায়নের জন্য মেয়র পারিষদকেও বলেছি। কিন্তু এ বছর করতে পারিনি। তবে এই ওয়ার্ড এবং আশপাশের ওয়ার্ডগুলিতে ছেলেদের খেলার জায়গার খুবই অভাব। ছেলেদের খেলার জায়গারও দরকার। তাই খেলতেও বারণ করতে পারি না। তবু চেষ্টা করব যাতে পার্কটিকে ভাল চেহারায় দাঁড় করানো যায়।”
অন্য দিকে, মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “ওই পার্কে ইতিমধ্যেই কেইআইপি শিশুউদ্যানটি নতুন করে সাজিয়েছে। মূল পার্কের কী অবস্থা তা আমি অবশ্যই খোঁজ নেব এবং কী করা যায় দেখব। তবে মাঠে খেলা বন্ধ করতে পারব না।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.