উত্তরবঙ্গের করলার মতো নদী নয়। তবে বেলডাঙার ডুমনিদহ ঝিলে স্তুপাকৃত মরা মাছ দেখে করলা-আতঙ্কই ছড়িয়েছে বেলডাঙায়।
শুক্রবার, স্থানীয় মৎস্যজীবীরা ওই বিলে নামতেই জালে উঠতে থাকে মরা মাছ। ওই বিলের প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশে মাছ ধরতে নেমে একের পর এক মরা মাছ দেখে চমকে ওঠেন। সাধারনত জলে বিষক্রিয়ার ফলেই এমনটা হয়। তাহলে কি ডুমনিদহে বিষ দিল কেউ? এ দিন সন্ধে পর্যন্ত অবশ্য সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা মেলেনি। তবে, বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের অজিত দত্ত বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে কেউ নিশ্চয় বিলে কীটনাশক মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার মাছ। এই দহের খাজনা সরকারকে দেওয়া হয়।”
হিজুলি মাঠপাড়া থেকে থেকে লাসিগ্রাম পর্যন্ত ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়েই এলাকায় যান স্থানীয় প্রসানের কর্তারা। যায় পুলিশও। বিলের মাছ যাতে কেউ না খায় কিংবা বাজারে না যায় সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রচারও।
কিন্তু এ দিন দুপুর গড়িয়ে গেলেও দেখা মেলেনি বেলডাঙা-১ মৎস্য দফতরের আধিকারিক দেবাশিস শীল ও জেলা মৎস্য অধিকর্তা কিশোর ধারার। ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। বিষয়টি জানানো হয় মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকিকে। জেলাশাসক বলেন, “জেলা মৎস্য অধিকর্তা ও ব্লক মৎস্য আধিকারিক দু’জনকেই কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।” এ ব্যাপারে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা বলেন, “এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত হবে।” |
সাত কিলোমিটার দীর্ঘ বিলটির দেখাশোনা ও মৎস্য কারবারের বিষয়টি দেখে স্থানীয় আণ্ডিরণ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সমিতিতে ৩১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি। সমিতির সম্পাদক মহাদেব হালদার বলেন, “রাতে কে বা কারা বিলে কীটনাশক ছড়িয়েছে বুঝতে পারছি না। কিন্তু এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।” স্থানীয় মৎস্যজীবী তাজেল বিশ্বাস বলেন, “যে এলাকায় মাছ মরেছে সেখানে ৩২ জন মৎস্যজীবী মাছের ব্যবসা করেন। আমরা এখানে ১৮-২০ লক্ষ টাকার মাছের চারা ফেলেছিলাম। জিওল, মাগুর, পোনা, বাটা, রুই, কাতলা ছিল। সব শেষ। বিডিও-র কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়েছি।”
এ দিকে, মাছ মরার খবর পেয়েই বিলে নেমে পড়েন এলাকার মানুষ। মরা মাছ ধরতে রীতিমতো ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় মৎস্যজীবীরাই প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মাছ ধরতে বাধা দেন। এই মাছ খাওয়া যে বিপজ্জনক সে ব্যাপারে ওই মৎস্যজীবীরাই এলাকার মানুষকে সচেতন করেন। মানুষকে সচেতন করতে দিনভর বেলডাঙা পুরসভা এলাকাতেও চলে ঘোষণা। এসডিও অধীর বিশ্বাস বলেন, “এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। মৎস্য দফতরের প্রতিনিধিরা এসে ক্ষতির হিসেব করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এলাকার মানুষ যাতে ওই মাছ না খায় এবং বাজারে ওই মাছ যাতে বিক্রি না হয় সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে।” |