আপনার সাহায্যে...
আর নয় ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’
দু’টি বক্তব্যই বলিউড অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক আমির খানের।
২০০৯-এ মুম্বইয়ে স্ত্রী কিরণ রাওয়ের মিসক্যারেজ-এর পর আমির ব্লগে জানিয়েছিলেন হতাশার কথা। আর দু’বছর পর মিডিয়াকে পাঠানো আমিরের চিঠি জানাচ্ছে তাঁর বাবা হওয়ার খবর। যে চিঠি অনেকখানি কেড়ে নিয়েছে সপ্তাহখানেক আগে বলিউডের ফার্স্ট ফ্যামিলিতে ঐশ্বর্যার মেয়ে হওয়ার খবরের পালের হাওয়া। কারণ একটাই। আমিরের সন্তান জন্মানোর অভিনব পদ্ধতি। ৪৬ বছরের আমির আর ৩৮ বছরের কিরণের মুখে হাসি ফোটালেন অন্য এক মহিলা সারোগেট মাদার। আইভিএফ-সারোগেসিতে ওঁদের সন্তানের জন্ম দিয়ে।
আর এটাই নাকি বন্ধ্যত্ব ঘোচানোর সর্বশেষ ও মোক্ষম দাওয়াই। বলছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর। সোজা কথায়, দম্পতি যখন নিজেরা সন্তানের জন্ম দিতে ব্যর্থ, সাহায্য নিচ্ছেন তৃতীয় কোনও মহিলার। কী সেই পদ্ধতি? ডা. খাস্তগীরের কথায়, ‘‘সন্তান জন্ম দিতে দরকার ভাল ডিম্বাণু, শুক্রাণু এবং জরায়ু। জরায়ু না থাকলে বা ত্রুটিযুক্ত হলে অন্যের গর্ভে সন্তানকে বড় করে তোলা যায়। এটাই সারোগেসি।”
২০০৯, অগস্ট ২০১১, ডিসেম্বর
‘একটা খারাপ খবর। আমাদের সন্তানকে
হারালাম। সব রকম চেষ্টা করেও মিসক্যারেজ
আটকানো গেল না। এই যন্ত্রণা কাটিয়ে
উঠতে আরও সময় লাগবে।’

‘বাচ্চাটা আমাদের কাছে
আরও বেশি প্রিয়। দীর্ঘ
অপেক্ষার পর বহু প্রতিবন্ধকতা
পেরিয়ে সে এসেছে।’
আবার মা’র শরীরে অসুবিধে থাকলে কৃত্রিম উপায়ে শরীরের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করে নিলে সেটি আইভিএফ-সারোগেসি। হবু মা’র শরীরে ডিম্বাণু না থাকলে ধার নেওয়া যায় সারোগেট মাদারের থেকেও। সে ক্ষেত্রে শুধু বাবার শুক্রাণুকে সারোগেট মাদারের দেহে নির্দিষ্ট দিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একে বলে আইইউআই সারোগেসি।” এ ক্ষেত্রে যিনি ডিম্বাণু দিচ্ছেন তিনি জেনেটিক মাদার, যাঁর শরীরে সন্তান বড় হবে তিনি বায়োলজিক্যাল মাদার এবং যাঁর শুক্রাণু তিনি বাচ্চাটির জেনেটিক ফাদার। আমিরের সন্তান জন্মানোর খবর হইচই ফেললেও ঘটনা আদৌ নতুন নয়। হলিউডের অনেকেই বহু দিন এর সাহায্য নিয়ে ইচ্ছে মতো সন্তান নিচ্ছেন। ব্র্যাড পিট আর অ্যাঞ্জেলিনার দত্তক নেওয়ার কনসেপ্ট এখন পুরনো। যেমন পপ সঙ্গীত তারকা রিকি মার্টিন। সমকামী রিকি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দত্তক নেওয়াই যেত। কিন্তু এটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি। বরং সারোগেসি সহজ ও চটজলদি সমাধান।” সারোগেট মাদারের সাহায্যে ২০০৮ সালের অগস্টে রিকি দু’টি যমজ ছেলের সিঙ্গল ফাদার হন! সতেরো বছর একসঙ্গে থাকার পর গে-কাপ্ল ৬৩ বছরের পপ গায়ক এলটন জন এবং তাঁর সঙ্গী ডেভিড ফারনিশ পুত্রসন্তান পান ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ক্লিনিকে সারোগেট মাদারের সাহায্যে। সেই একই সারোগেট মাদার ২০০১ সালে অভিনেতা কেলসি গ্রামার ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী ক্যামেলিয়ার মেয়ের জন্ম দেন। পপ সঙ্গীত তারকা মাইকেল জ্যাকশন মেক্সিকান নার্স হেলিনাকে বেছেছিলেন তৃতীয় সন্তানের জন্য।
ডা. খাস্তগীর বলছেন “শুধু বিদেশেই নয়, খোদ কলকাতাতেই সারোগেট মাদারের সাহায্য নিচ্ছেন অনেকেই।” পরিসংখ্যান বলছে, এখানে ফি-মাসে অন্তত পঁচিশটা সারোগেসি হয়। মেয়ে হয়ে জন্মালেও কারও কারও জরায়ু থাকে না। বা জটিল রোগে জরায়ু বাদ গেলে সন্তান আসতে চায় না। গর্ভপাতের সময় জরায়ুর ভেতর বেশি চেঁছে ফেললেও বন্ধ্যত্ব আসতে পারে। তখন সারোগেসির পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রয়োজনে সারোগেসির শরণাপন্ন হলেও অনেকেই এই কাজটি গোপনে সারেন। ঠিক ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’র মতো। যেখানে স্ত্রী প্রিয়ার (রানি মুখোপাধ্যায়ের) সন্তান না হওয়ায় রাজ (সলমন খান) সাহায্য নিয়েছিলেন পতিতা মধুবালার (প্রীতি জিন্টার)। এবং দু’জনকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন চেনা-পরিচিতের আড়ালে, প্যারিসে। এখানেই বাজিমাত আমিরের। তাঁর অনেক সিনেমার মতো স্বতন্ত্রতার ছাপ রাখলেন আমির। একটানে সরিয়ে দিলেন লুকোছাপার মেকি পর্দা।
আইন কী বলে?
সারোগেট মাদার এবং তাঁর স্বামীই বাচ্চাটির আইনত বাবা-মা। এঁদের কাছ থেকে বাচ্চাকে দত্তক নিতে হয় জেনেটিক বাবা-মা’কে। চুক্তি করেও অনেক সময় সারোগেট মা পরবর্তী কালে সন্তানকে না-ও দিতে চাইতে পারেন।
আগেভাগে টাকা নিয়ে কেউ হয়তো প্রেগন্যান্সির পরই ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাত করিয়ে নিলেন। এ রকম ঘটনাও ঘটে।

দত্তক নয়, নিজের সন্তান নিন
ডা. গৌতম খাস্তগীর
প্র: কিছুতেই প্রেগন্যান্সি আসছে না। এ দিকে বয়স গড়িয়ে যাচ্ছে। নিজের সন্তান কী করে পেতে পারি?
উ: সারোগেট মাদারের সাহায্য নিন।

প্র: কিন্তু সে তো অন্যের সন্তান।
উ: না না। আপনাদেরই ভ্রূণ। বড় হবে শুধু অন্যের গর্ভে।

প্র: সে তো বহু ঝামেলার?
উ: না। সাধারণ প্রেগন্যান্সির মতোই শুধু অন্য মহিলার সাহায্য নিচ্ছেন।

প্র: অন্য মহিলা রাজি হবেন কেন?
উ: পয়সার জন্য কেউ কেউ রাজি হন। কেউ বা অন্যকে সাহায্য করতে।

প্র: সারোগেট মাদার কোথায় পাব?
উ: আইভিএফ ক্লিনিকগুলোতে এঁদের খোঁজ পাবেন। তা ছাড়া পরিচিতদের মধ্যেও যে কোনও বিবাহিত মহিলা সারোগেট মাদার হতে পারেন।

প্র: সেই ক্লিনিকগুলির খোঁজ পাব কী করে?
উ: কলকাতায় বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য আইভিএফ ক্লিনিক আছে। একটু খোঁজখবর নিন। গুগল সার্চ-এও বিস্তারিত পাবেন।

প্র: কোনও বিধিনিষেধ নেই?
উ: বয়স ৩৫-এর কম হতে হবে। ৩০-এর কম হলে আরও ভাল। মহিলার একটি সন্তান থাকতে হবে, যার কোনও জন্মগত ত্রুটি নেই।

প্র: সন্তান না থাকলে সারোগেট মা হতে পারবেন না?
উ: থাকলে ভাল। এর থেকে বোঝা যায় মহিলা সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে এগোনো আর কী!

প্র: আর কোনও কিছু?
উ: মহিলা থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়ার মতো জন্মগত কোনও রোগের বাহক যেন না হন। ছোঁয়াচে রোগ থাকলে বা ক্রনিক অসুখ থাকলেও সারোগেট মাদার হওয়া যাবে না।

প্র: বাচ্চার কোনও অসুবিধে হবে না তো?
উ: বললাম তো, এটা আর পাঁচটা প্রেগন্যান্সির মতনই।

প্র: খরচ তো অনেক।
উ: আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নিলে খরচ শুরু ৬০,০০০ টাকা থেকে। আর যদি আইইউআই পদ্ধতিতে করেন, খরচ হতে পারে ১৫,০০০ মতো।

প্র: শেষমেশ সন্তান আসবে তো?
উ: আইভিএফ করলে সাফল্য প্রতিবারে ৪০ শতাংশ। মোটামুটি তিন বার করলে নিশ্চিন্ত।
লাজলজ্জার কিছু নেই দিনকাল বদলেছে। মহিলারা নিজেরাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অন্যের ভ্রূণকে গর্ভে বড় করলে কোনও ক্ষতি নেই। বরং সন্তানধারণ করলে কমে ফাইব্রয়েড, ওভারিতে সিস্ট এবং ওভারিতে ক্যানসারের সম্ভাবনা। ব্রেস্ট-এ বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
সারোগেট মা বাচ্চার সঙ্গে না থাকলে ওষুধের মাধ্যমে ব্রেস্ট মিল্ক বন্ধ করে দেওয়া যায়। সারোগেসি এক রকমের সাহায্য। তাই এটি লুকিয়ে রাখা অযৌক্তিক।

ফোন-৯৮৩০৬৬৬৬০৬ এবং ৯৮০৪৮৮৮৮০৮


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.