সম্পাদকীয় ২...
বিলম্বিত প্রস্থান
বশেষে ইরাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মার্কিন যুদ্ধনিশান নামাইয়া লইয়া প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামা তাঁহার ইরাক হইতে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিলেন। তাঁহার পূর্বসূরি জর্জ ওয়াকার বুশের শুরু করা এই যুদ্ধে গত নয় বছরে সাড়ে চার হাজার মার্কিন নৌসেনা নিহত হইয়াছে, মার্কিন কোষাগার হইতে খরচ হইয়াছে এক লক্ষ কোটি ডলার। বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী অর্জন করিয়াছে? আন্তর্জাতিক ধিক্কার। সাদ্দাম হুসেন গণধ্বংসের রাসায়নিক ও জৈব মারণাস্ত্র মজুত করিতেছেন এবং সন্ত্রাসবাদী আল-কায়দার পৃষ্ঠপোষণ করিতেছেন, এই কাল্পনিক এবং মিথ্যা-প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে জর্জ বুশের ইরাক আগ্রাসন প্রমাণ করিয়াছে মহাশক্তির ছলের অভাব হয় না। মার্কিন নৌসেনাদের মৃত্যু, আবু ঘ্রাইব ও গুয়ান্তানামো বে-তে জঙ্গি সন্দেহে বন্দিদের অমানবিক নির্যাতন মার্কিন জনমতকেও ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে সমাবেশিত করে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসাবে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলিয়া দেয়।
মার্কিন এই আগ্রাসন ইরাককে কী দিল? কত লক্ষ নিরপরাধ ইরাকির মৃত্যু? মেসোপটেমিয়ার সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলির বিনাশ। সর্বোপরি, ইরাকের তিন জনগোষ্ঠী শিয়া, সুন্নি ও কুর্দদের মধ্যে তীব্র ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ, যাহা নিরন্তর মানববোমার বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হইতেছে। সাদ্দাম হুসেনের একনায়কত্বেও তিন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক অনাস্থা ছিল। কুর্দদের উপর তো সাদ্দাম নিয়মিত বোমাবর্ষণ করিতেন। কিন্তু ইরাকে যে-নৈরাজ্য ও মাৎস্যন্যায় চলিতেছে, আরও দীর্ঘ কাল চলিতে থাকিবে, তাহা ওয়াশিংটনের অবদান। সাদ্দামের কর্তৃত্ব ধ্বংস করিয়াও কোনও বিকল্প প্রশাসনিক কর্তৃত্ব গড়িয়া তোলার ব্যর্থতা ইরাককে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, উন্নত আর্থিক শক্তি হইতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ক্লিষ্ট, ছন্নছাড়া, অরাজক ভূখণ্ডে রূপান্তরিত করিয়াছে, যাহা কেবল প্রতিবেশী শিয়া রাষ্ট্র ইরানের প্রভাববলয়ে প্রবেশের অপেক্ষায়। ইরাক কেবল মার্কিন সমরনীতির চরম ব্যর্থতারই মাইলফলক নয়, মার্কিন রণনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির অদূরদর্শিতার নিদর্শনও বটে। মার্কিন-বিরোধী মোল্লা মুক্তাদা আল-সদর এবং ইরাকের পবিত্র শিয়া নগরী নজফ্-এ ইরানের মোতায়েন করা ইমাম নিশ্চিত করিবেন যে, শিয়া-গরিষ্ঠ ইরাক অতঃপর ইরানের সঙ্গেই আপন নিয়তি জুড়িয়া লইবে, সাদ্দাম হুসেনের ইরাকে যাহা অভাবনীয় ছিল।
ইরাকের উৎকৃষ্ট তেলের ভূগর্ভস্থ ভাঁড়ারের দখল লইতে পশ্চিমী, রুশ ও চিনা পুঁজিপতিদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়িয়া গিয়াছে। সাদ্দামের যুগে এই সম্পদের বিনিময়মূল্য লইয়া ইরাকের যে দরকষাকষির ক্ষমতা ছিল, তাহা স্বভাবতই অন্তর্হিত। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত বলিলে কম বলা হয়। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের অববাহিকায় যে ঊর্বর কৃষি ছিল, তাহাও লণ্ডভণ্ড। তদুপরি নিত্য সন্ত্রাসের কালো ছায়া। চতুর্দিকে মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। বিধ্বস্ত প্রাসাদ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত আবাসন, ধূলিসাৎ মসজিদ, বাজার, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল। অরাজক ইরাকের প্রতিটি আনাচ-কানাচ হইতে স্বার্থান্বেষীরা যখন-তখন সশস্ত্র বাহির হইয়া নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে, ব্যবসায়ী, দোকানদার, শিক্ষক, কারখানা-শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ করিতে পারে কিংবা বিস্ফোরক দিয়া উড়াইয়া দিতে পারে। সমৃদ্ধ ইরাক মার্কিন দাক্ষিণ্যে আজ এক রিক্ত প্রেতপুরী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.