লোকপাল যাতে সংবিধানের ঊর্ধ্বে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে খোদ সর্বদল বৈঠকেই। এবং সে কথা মাথায় রেখেই লোকপালের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে চাইছে মনমোহন সিংহের সরকার। তারা যে চূড়ান্ত বিলটি আনতে চলেছে, সেখানে লোকপালের সদস্যদের ইমপিচ করার প্রসঙ্গও থাকতে পারে। বলা হতে পারে, সংসদের উভয় কক্ষ মিলিয়ে একশো জন আবেদন করলেই ইমপিচমেন্ট নিয়ে প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। এবং তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে শুরু হবে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া।
শুধু লোকপালের সদস্যদের দায়বদ্ধ করা নয়, সরকার চাইছে চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ করিয়ে ফেলতে। সে জন্য অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৯ ডিসেম্বর করতে চায় তারা। সরকারের শীর্ষ সূত্রের খবর, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে লোকপাল বিলটিকে অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী মস্কো সফর সেরে দেশে ফেরার আগেই বিলের খসড়া কার্যত চূড়ান্ত করে ফেলা হচ্ছে।
সেই চূড়ান্ত খসড়ায় কী কী থাকবে, এই মুহূর্তে অণ্ণা হজারে থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় রাজনীতির কৌতূহল মূলত সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই। বিশেষ করে গত পরশু প্রধানমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে লোকপাল বিলের খুঁটিনাটি নিয়ে সর্বসম্মতি না হওয়ায় চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা ছিল সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু মন্ত্রিসভার শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত খসড়ায় যে বিষয়গুলি থাকবে তা মোটামুটি এই রকম: এক, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখলেও যথাসম্ভব রক্ষাকবচ থাকবে। বিদেশ সংক্রান্ত, নিরাপত্তা, পরমাণু অস্ত্র, মহাকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রক্ষাকবচ তো থাকবেই। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হবে, কোনও অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হলে লোকপালের ৯ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৭ জনকে একমত হতে হবে। শুধু তাই নয়, সেই বৈঠকটি ক্যামেরায় তুলে রাখতেও হবে। দুই, আমলাতন্ত্রের নিচুস্তর তথা গ্রুপ সি কর্মচারীরা সরাসরি লোকপালের আওতায় থাকবেন না। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন তাঁদের উপর নজর রেখে সময়ান্তরে লোকপালের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। তিন, লোকপালের ৯ সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত সংরক্ষণ নীতি (তফসিলি জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু) মেনে চলা হবে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে। চার, সংসদের কাছে লোকপালের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করা হবে। পাঁচ, সিবিআই ডিরেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও লোকপালকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সিবিআইকে লোকপালের আওতায় রাখা হবে না। বরং এ ব্যাপারে সিবিআই প্রধানের মতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বুধবার সিবিআইয়ের প্রধান অমরপ্রতাপ সিংহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁর মতে, তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের স্বাধীনতা খর্ব হওয়া উচিত নয়। সিবিআইয়ের ডিরেক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটি তৈরি হলে অবশ্য সংস্থার কর্তাদের কোনও আপত্তি নেই।
সরকারের এক শীর্ষ নেতা আজ জানান, পুরনো বিলের পরিবর্তে একটি নতুন লোকপাল বিলই সংসদে পেশ করা হবে। যাতে চলতি মাসেই লোকপাল বিলটি সংসদে পাশ করানো যায়, সে লক্ষ্যে অধিবেশনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হবে। বিরোধীরা তাতে সম্মতি দিলে এ মাসেই বিলটি পাশ করানো সম্ভব। অণ্ণা হজারে ২৭ ডিসেম্বর থেকে ফের আন্দোলনে নামতে চলেছেন। আবার মনমোহন-সনিয়াও এই অধিবেশনেই বিলটি পাশ করানোর কথা বলেছিলেন। তাই সরকার আর দেরি করতে চাইছে না।
|