চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
প্রতিটি ছবিতেই বোঝা যায় রাবীন্দ্রিক অভিব্যক্তি
নাট্যকলা একটি সমন্বিত শিল্পমাধ্যম। সাহিত্য, চিত্র, সঙ্গীত, নৃত্য - সব কিছুরই সারাৎসার থেকে রসদ সংগ্রহ করে নাট্যকলা। ‘শূদ্রক’ কলকাতা ভিত্তিক একটি সুপরিচিত নাট্যগোষ্ঠী। প্রতি বছর তাঁরা যে নাট্যোৎসব করেন, তাতে সহযোগী মাধ্যমগুলির সঙ্গে বিনিময়ের সূত্রে একটা ঐকতান গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। এ বছরও তাঁদের নাট্যোৎসবের সঙ্গে আয়োজিত হয়েছে চিত্র-ভাস্কর্য প্রদর্শনী, সঙ্গীতের আসর এবং এ সবের অন্তর্গত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সভা। দৃশ্যকলার প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। এ বারের প্রদর্শনীটি প্রধানত রবীন্দ্রভাবনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যার শিরোনাম - ‘ট্রান্সেন্ডিং বাউন্ডারিজ : হোমেজ টু রবীন্দ্রনাথ।’ পাঁচ জন ভাস্কর ও ২৫ জন চিত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। দু’একজন বাদে প্রায় সকলেরই ছিল দুটি করে কাজ। কেউ কেউ কাজ করেছেন রবীন্দ্র-ভাবনার বা রবীন্দ্রসাহিত্যের কোনও অনুষঙ্গ নিয়ে। অনেক শিল্পীই তাঁর নিজস্ব রূপরীতির পরিচিত গণ্ডির বাইরে এসে গড়ে তুলেছেন নতুন রূপভঙ্গি।
তাপস সরকারের অনামা ব্রোঞ্জটিতে বিস্তীর্ণ নিসর্গে রবীন্দ্র-প্রতিমাকল্পকে শায়িত অবস্থায় দেখা যায়। সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রস্মরণের অছিলায় তাঁকে নিয়ে যে উৎকট কলরোল চলছে, তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষ্য রচনা করেছেন শিল্পী। অসীম বসু কাজ করেছেন ‘চণ্ডালিকা’ ও ‘তোতা-কাহিনী’র অন্তর্নিহিত ভাবনাকে নিয়ে। বিমল কুণ্ডুর একটি ব্রোঞ্জের বিষয় ‘মা ও শিশু’। অন্যটি ‘বীরপুরুষ’এর অনুষঙ্গে রচিত। সুব্রত বিশ্বাস চারটি বৃত্তাকার রিলিফ বা নতোন্নত পদ্ধতির ব্রোঞ্জ পাশাপাশি সংস্থাপন করেছেন। প্রত্যেকটির প্রকৃতির সঙ্গে শৈশবের কল্পরূপাত্মক মাধুর্যময় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। নান্টু বিহারী দাস তাঁর ফাইবার গ্লাসের রচনাটির নাম দিয়েছেন ‘সোনার বাংলা’। একটি শিশুর মুখাবয়বের উপর ছড়িয়ে আছে অজস্র সবুজ ও হলুদ পাতা। রৌদ্রছায়ার খেলায় প্রকৃতি-আপ্লুত হয়ে উঠতে চাইছে যেন শৈশব।
শিল্পী: শান্তনু মাইতি
পার্থপ্রতিম দেবের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস দুটির শিরোনাম - ‘ডিসকভারি চ্যানেল ১ ও ২’। নতুন আবিষ্কারের জন্য মানুষের যে নিরন্তর গবেষণা, তারই অনুষঙ্গে গড়ে উঠেছে তাঁর ছবিদুটি। মানুষ যেভাবে প্রসারিত করে নিজের পরিসীমা, তারই প্রতি যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন শিল্পী। ‘জীবনে কোনও বিপুল প্রেমের আনন্দে এমন একটা পরম মুহূর্ত আসতে পারে যখন আমার চৈতন্যের নিবিড়তা আপনাকে অসীমের মধ্যে উপলব্ধি করে’। ৫ বৈশাখ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে লেখা রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কাঞ্চন দাশগুপ্তের ছবি দুটি।
সাগরের কানে জোয়ার বেলায়
ধীরে কয় তটভূমি
তরঙ্গ তব যা বলিতে চায়
তাই লিখে নাও তুমি
’।
‘লেখন’ কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের এই বাণীকে উৎকীর্ণ করেছেন আদিত্য বসাক তাঁর ছবিতে। অশোক ভৌমিক তাঁর ছবিদুটি গড়ে তুলেছেন চৈনিক চিত্র আঙ্গিককে ভিত্তি করে, যে প্রাচ্য-আঙ্গিককে রবীন্দ্রনাথ নানাভাবে উদ্বোধিত করেছেন।
অসিত পালের ছবিটির বিষয় উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথ ও কিশোরী রানু মুখোপাধ্যায়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। সমীর আইচের প্রায় বিমূর্ত ছবিটির শিরোনাম - ‘
আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে?’ অরুণিমা চৌধুরীর দুটি নিসর্গচিত্রেই রবীন্দ্র-আঙ্গিকের প্রভাব আছে। গৌতম চৌধুরী মানবিক প্রতিমাকল্পকে বিমূর্তায়িত করেছেন অন্তর্লীন শূন্যতার অনুষঙ্গে। সমীর রায়ের ‘একলা পাগল’ ছবিতে মানুষী অবয়বের যে কল্পরূপাত্মক ভাঙন, তাও রবীন্দ্র-অনুষঙ্গবাহী। একই কথা বলা যায় তরুণ ঘোষের ছবি সম্পর্কে। ঈলীনা বণিকের ‘স্টোরি অব কমপ্যাশন’ ও ‘পিপল’ দুটি ছবিতেই প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে রাবীন্দ্রিক অভিব্যক্তি। সৌমিত্র কর গুয়াশ মাধ্যমে এঁকেছেন ‘সোনার তরী’ নামে দুটি নিসর্গ, যা তাঁর পরিচিত আঙ্গিক থেকে আলাদা।
ছত্রপতি দত্ত আলোকচিত্রের ডিজিটাল প্রিন্ট নিয়ে কাজ করেছেন। পুরুষের মুখ ও নারীর মুখোশ-এর অন্তর্লীন সম্পর্কের নাটকীয়তা ও সমাজতান্ত্রিক আবহ তাঁর রচনার প্রধান উপজীব্য। শান্তনু মাইতির ২০টি ছোট ফ্রেমের সমাহারে গড়ে তোলা বড় ছবির শিরোনাম ‘
অ্যাবোড অব পিস।’ মূর্ত ও বিমূর্তের সমন্বয়ে গড়ে তোলা ছবিটিতে শান্তনু নিজেকে অনেকটা প্রসারিত করেছেন। অরুণাংশু রায়ের অলঙ্করণ-সমৃদ্ধ ছবি দুটি রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি কাটাকুটির ছবির প্রেরণায় করা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.