মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে দিল্লি-সফর কাটছাঁট করে শুক্রবার রাতেই কলকাতা ফিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সন্ধ্যায় একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে ‘সেরা ভারতীয়’ সম্মান নিতে গিয়েছিলেন মমতা। রাজনীতির ক্ষেত্রে ওই সম্মানের জন্য মনোনীত হন তৃণমূল নেত্রী। দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পৌঁছেই মমতা খবর পান, তাঁর মায়ের অবস্থার অবনতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মোবাইলে ফোন করে তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি গায়ত্রীদেবীর শারীরিক অবস্থার কথা জানান। এক সময়ে তাঁর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাইরে থেকে পেসমেকার সংযোগে কৃত্রিম ভাবে তা চালু রাখা হয়েছে। মুকুলবাবু বিন্দুমাত্র দেরি না-করেই মুখ্যমন্ত্রীকে খবর দেন। মমতা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করেন, তখনই তিনি কলকাতা ফিরবেন।
মমতা দ্রুতই অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে পড়তে উদ্যোগী হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারেননি। মমতার সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে আসেন মুকুলবাবু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এবং সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
|
দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: পিটিআই |
উদ্যোক্তারা গিয়ে মমতাকে অনুরোধ করেন ফিরে আসার জন্য। মমতা তাঁদের জানান, মায়ের শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। এখনই কলকাতায় ফিরতে হবে। উদ্যোক্তাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত পুরস্কার নেওয়ার জন্য আরও কিছু ক্ষণ থাকতে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী। রাতে মমতা বলেন, “আমি তো তখনই বিমানবন্দরে চলে আসছিলাম। ওঁরা (উদ্যোক্তারা) জোরাজুরি করে নিয়ে গেলেন ভিতরে। কোনও মতে পুরস্কার নিয়ে সেখান থেকেই বিমানবন্দরে এসেছি। রাতের শেষ বিমান ধরে কলকাতা ফিরছি।” উদ্যোক্তাদের অনুরোধে অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে গেলেও মমতা মূল হলে (তখন ওই হলে উপস্থিত হয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, অণ্ণা হজারে, যুবরাজ সিংহ-সহ অন্য পুরস্কার প্রাপকেরা) আর যাননি। তিনি বসে থাকেন পাশের একটি ‘অ্যান্টি চেম্বারে’ (এর আগেও মমতা বরাবরই অণ্ণা হজারেকে এড়িয়ে গিয়েছেন। দু’দিন আগে লোকপাল প্রশ্নে মমতাকে দলে টানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন অণ্ণা। মমতা তখনও বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যান)। কথা ছিল, রাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মমতা একটি বৈঠক করবেন। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা কারণে তা-ও বাতিল হয়ে যায়। কলকাতায় নেমেই মমতা এসএসকেএম হাসপাতালে সোজা মাকে দেখতে চলে যান। অনুষ্ঠানে বেশিক্ষণ না থাকলেও পুরস্কার-মঞ্চে মমতা অবশ্য ছিলেন তাঁর চেনা মেজাজেই। একটি প্রশ্নের জবাবে স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে মমতা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে ফেলে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়াও নয়। তবে কেন্দ্রকেও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জিনিসের দাম না-বাড়ে!” দেশের সবচেয়ে ‘ক্ষমতাশালী’ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখন কি তাঁর নামই উচ্চারিত হচ্ছে না? মমতার জবাব, “ও সব কিছু নয়! আমি সাধারণ মানুষ। আমার দলও ক্ষুদ্র! সে রকমই থাকতে চাই। তবে নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা রাখতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জীবনে যখনই কাউকে কোনও কথা দিয়েছি, তা রেখেছি।” রাতে নাকি তিনটে পর্যন্ত জেগে কর্মীদের এসএমএসে নির্দেশ পাঠান তিনি? মমতার কথায়, “রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্তা এবং সাংবাদিক এঁদের কাজের কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যে কোনও সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে। এটা ঠিকই, অনেক সময়ই আমি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলি।”মঞ্চে নিজেকে ‘ক্ষুদ্র’ হিসাবে অ্যাখ্যা দিলেও যেটুকু সময় অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন, স্পটলাইট কিন্তু ছিল মমতার উপরেই। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারেরা এসে যেচে তাঁর সঙ্গে আলাপ করে গিয়েছেন। চিত্রপরিচালক শ্যাম বেনেগাল আগাগোড়া তাঁর পাশে বসেছিলেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত এসে বলে যান, “আপনি একের পর এক ছয় মারছেন! আপনার ব্যাটিং স্টাইলটা কিন্তু পাল্টাবেন না!” |