চালু হচ্ছে কুড়ানকুলাম: মনমোহন
পরমাণু মানচিত্রে বাংলা বাদ, খোঁজা হবে পরিবর্ত
ম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছিল। আজ সরকারি ভাবে রাশিয়াকে ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, পশ্চিমবঙ্গের হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। যার অর্থ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তিতে ভারতের পরমাণু বিদ্যুৎ মানচিত্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের নাম শেষ পর্যন্ত বাদ চলে গেল। পশ্চিমবঙ্গের বদলে ওড়িশায় নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি খোঁজার কাজ শুরু হবে। রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে হরিপুরের প্রকল্প বাতিল হওয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামের পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে চালু হবে বলে আজ আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ক্রেমলিনের প্রাসাদে মেদভেদেভের সঙ্গে দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে মনমোহনের ঘোষণা, “আমি আশাবাদী যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কুড়ানকুলামের প্রথম চুল্লিটি চালু করার ব্যাপারে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আর তার ছ’মাসের মধ্যে দ্বিতীয় চুল্লিটির কাজে হাত দেওয়া হবে।”
ঘরের রাজনীতির বাধা আর বাইরের কূটনীতির বাধ্যবাধকতা এই দুই মেরুর মাঝে দাঁড়িয়ে আরও এক বার ঝুঁকি নিলেন মনমোহন সিংহ। এক দিকে যেমন কেন্দ্রে সরকারের প্রধান শরিক তৃণমূলের সঙ্গে মনমালিন্য এড়াতে হরিপুরের প্রকল্প বাতিল করলেন, তেমনই আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখে কুড়ানকুলাম নিয়ে ঘোষণাটা করে দিলেন তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ছবি: এ পি
নিছক এই ঘোষণার মধ্যে ঝুঁকিটা কোথায়, তা বুঝতে গেলে ফিরে দেখতে হয় কুড়ানকুলামের সাম্প্রতিক ছবিটা। যখন পরমাণু চুল্লির বিরোধিতায় স্থানীয় মানুষের অনশনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার ধারাবাহিক চিঠি পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। যে সব চিঠিতে কুড়ানকুলাম নিয়ে তাঁর আপত্তি স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন জয়া। সেই জয়া, যার এডিএমকে দলের সঙ্গে নতুন সমীকরণ গড়তে সচেষ্ট প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আজ মস্কোয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কুড়ানকুলামে। যা নিশ্চিত ভাবেই দিল্লির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এবং সে কারণেই মনমোহনের ‘ঝুঁকি’ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের ভরকেন্দ্র ছিল আজ ক্রেমলিনের প্রাসাদ। মেদভেদেভের পাশে বসে মনমোহনের ওই ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের মধ্যে এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কুড়ানকুলাম নিয়ে মস্কো-দিল্লি এই বোঝাপড়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যদিও বা হয়ে থাকে, তা হলেও প্রকাশ্য সাংবাদিক বৈঠকে এমন ভাবে ঘোষণা করা হল কেন? এতে কি নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না? মস্কো সফরে আসার আগে এ ব্যাপারে জয়ললিতার সঙ্গে কেন্দ্রের সমঝোতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি অনেকেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এতটা স্পষ্ট করে মনমোহনের ঘোষণার পরিণাম নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তার সঙ্গেই রয়ে যাচ্ছে চেন্নাই থেকে নয়াদিল্লি নানা মহলের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা। তা ছাড়া লোকসভার অধিবেশন চলছে। আগামী সপ্তাহে লোকপাল বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংসদে ওঠার কথা রয়েছে। তার আগে এই ঘোষণা কী প্রভাব ফেলে, এখন সেটাও দেখার।
অবশ্য, কুড়ানকুলামে বিক্ষোভের ফলে যে ‘সাময়িক সমস্যা’ তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে বলে আশাবাদী মনমোহন। এটাও তাৎপর্যপূর্ণ যে, কুড়ানকুলামের কাজ শুরুর ব্যাপারে ঘোষণার দিনে হারিয়ে গেল হরিপুর ঘিরে তাঁর স্বপ্ন। এবং কুড়ানকুলামের তৃতীয় ও চতুর্থ চুল্লির ব্যাপারে দু’দেশ কোনও চুক্তি সই করল না। শীর্ষ বৈঠকে এ দিন সুখোই যুদ্ধবিমান-কেনা সহ পাঁচটি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।
মস্কোয় আসার আগে কয়েক জন রুশ সাংবাদিককে মনমোহন বলেছিলেন, “একশো কুড়ি কোটির দেশ ভারত। আপাত ভাবে তা সামলানো যতই কঠিন মনে হোক, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে দেশের সেবা করতে পেরে আমি গর্বিত।” আর আজ ক্রেমলিনের বৈঠক শেষে তাঁর ঘোষণার পরে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তা বলেন, “ও কথা বললেও বিদেশ সফরে এসেও প্রতি পদে প্রধানমন্ত্রী বুঝছেন যে, তিনি যা চান তা বাস্তবায়িত করা কত কঠিন!”
তবে কূটনীতিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, আসলে তিস্তা চুক্তি থেকে শুরু করে খুচরো বিতর্ক, এমনকী খাদ্য সুরক্ষা বিলেও বাধা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা বিরক্ত। নীতি নির্ধারণ নিয়ে সরকারের ‘পঙ্গু’ দশা বারবার প্রকট হচ্ছে। সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলেও। আর শুধু তো ঘরোয়া চাপ নয়, কুড়ানকুলাম নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছিল রাশিয়াও। কারণ এটা ‘দেওয়া-নেওয়া’র ব্যাপার। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা চায় নয়াদিল্লি। শুধু যুদ্ধবিমান, ডুবোজাহাজ কেনা নয়, সেগুলির প্রযুক্তি হস্তান্তরও চায়। এও চায়, প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক যেন মজবুত না হয়। রয়েছে শক্তিক্ষেত্রে চাহিদাও। সম্প্রতি দেশের সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে তেল ও গ্যাসের ওপর কর চাপিয়েছে পুটিন প্রশাসন। সে ক্ষেত্রেও ছাড় চায় ভারতীয় সংস্থাগুলি। এত চাহিদা মেনে রাশিয়া শুধুই দেবে? কিছু চাইবে না?
কুড়ানকুলাম সংক্রান্ত প্রশ্নটা আজ ওঠে রুশ সাংবাদিকদের তরফেই। এক কূটনৈতিক কর্তার কথায়, “বোঝাই যায়, এ ব্যাপারে আমাদের থেকে ওদের চাহিদা বেশি। ভুললে চলবে না, দু’বছর আগে এই ক্রেমলিনেই মনমোহন-মেদভেদেভ বৈঠকে হরিপুরে নয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার ঘোষণা হয়। ঘরোয়া রাজনীতির কারণে যা এখন বিশ বাঁও জলে। এই অবস্থায় রাশিয়াকে কিছু একটা দিতেই হত। তাই কুড়ানকুলাম নিয়ে ঘোষণাটা করতেই হয়েছে মনমোহনকে।”
রাশিয়ার মাটি থেকে ঘরোয়া রাজনীতিতেও একটা বার্তা পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী। পরমাণু চুক্তির বাস্তবায়নে তিনি বদ্ধপরিকর। যার অর্থ, আরও একবার ঝুঁকি নেওয়া। আরও একবার হিম্মত দেখানোর চেষ্টা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.