বিষমদে এত মানুষের মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি উলুবেড়িয়ার। শাঁখাডাঙা, মদাই, কাঁটাখালি, হীরাপুর অঞ্চলে এখনও রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার।
উলুবেড়িয়ায় এসডিপিওর কোয়ার্টার থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই শাঁখাডাঙা-সহ হীরাপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, নদীর ধারে বাঁধের গায়ে বড় বড় দু’টি চৌবাচ্চায় চোলাই তৈরিতে ব্যস্ত এক ব্যক্তি। বললেন, “টিভিতে সবই দেখছি-শুনছি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো শ্রমিক মাত্র।” মালিকের সঙ্গে ওপর মহলের যোগাযোগ আছে বলে জানালেন তিনি। ফলে ‘ভয়ের কিছু’ দেখছেন না। যদিও বললেন, “মনে হচ্ছে, এখন ক’দিন ব্যবসা বন্ধ থাকবে। সদ্য এতগুলো লোক মারা গেল তো!”
এলাকার মানুষ চোলাইয়ের এই কারবার নিয়ে বহু বার পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। |
চোলাইয়ের কারবারিদের বিরুদ্ধে পাকাপাকি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদাইয়ের এক যুবক জানালেন, তাঁর বাড়ি আশেপাশেই গোটা বারো চোলাইয়ের ভাটি আছে। জন্ম থেকেই এ সব দেখছেন। বাবা-কাকারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে ‘টার্গেট’ হয়ে গিয়েছেন। এখন সব কিছু মুখ বুজে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ই বা কী!
একই অবস্থা দেখা গেল সোমরুকের আমতলা গ্রামে। চোলাইয়ের কারবারের বাড়বাড়ন্ত এখানেও। একাধিক ভাটি আছে। পাশেই ছোট ছোট কয়েকটি ঝুপড়িতে বসে দিনের বেলাতেই নেশা করতে দেখা গেল অনেককে। কাছেই আমতলা খাল। চোলাই তৈরির বর্জ্য ফেলতে ফেলতে সেটি প্রায় বুজে এসেছে। এলাকার মানুষ জানালেন, খাল মজে যাওয়ায় চাষবাসের খুবই সমস্যা হচ্ছে। পুলিশকে এ ব্যাপারে বার বার জানানো সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। মাঝে মাঝে পুলিশ হানা দেয় বটে, কিন্তু ‘রহস্যজনক’ পুলিশ আসার আগেই চোলাইয়ের কারবারিরা সরে পড়ে। পুলিশ পিছন ফিরতেই ফের শুরু হয় ব্যবসা।
হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চোলাইয়ের ঠেকগুলিতে নিয়মিত হানা দেওয়া হয়। বুধবারও তল্লাশির সময় ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তল্লাশির সময় যে কারবারিরা পালিয়ে গা ঢাকা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনও ধারায় মামলা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ আধিকারিক। যাতে ওই ব্যক্তি ফের ব্যবসা ফেঁদে না বসতে পারেন।
কিন্তু এমন প্রতিশ্রুতি বহু শুনেছেন স্থানীয় মানুষ। চোলাইয়ের কারবার পাকাপাকি বন্ধ হবে কবে বা আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে তাঁদের পুলিশ-প্রশাসনের কথায় কার্যত আর কোনও ভরসা নেই। |