অবশেষে শীতের মরসুমই হাসি ফোটাল আমজনতার মুখে। শাক-সব্জির নতুন ফলন বাজারের থলি ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই টেনে নামাল খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে। গত ৩ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে এক ধাক্কায় ৬.৬% থেকে ৪.৩৫ শতাংশে। যা চার বছরের মধ্যে সবর্নিম্ন। আর, এই কারণেই আগামী কাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি ফিরে দেখতে গিয়ে সুদ বৃদ্ধিতে আপাতত দাঁড়ি টানতে পারে বলে মনে করছে শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহল।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বার্ষিক ভিত্তিতে সব্জির দামই কমেছে ১২%। পেঁয়াজ ৪৬%, আলু ৩৩%, গম ৪.৪%। তবে ডিম, দুধ ও ডালের দাম এখনও কমেনি। ফলের দাম ৯.৩৭% হারে বাড়াটাও অস্বস্তির কারণ। যদিও অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা কৌশিক বসু বলেন, “জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৩ শতাংশেরও নীচে নামবে।” এ দিকে বিমান জ্বালানি এটিএফের দামও এ দিন ১.৩% কমানোর কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি।
২০০৮ গত বছর একই সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছিল ১০.৭৮%। এ বছর তা সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি জোগালেও সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ৯.১১ শতাংশে (নভেম্বরে) থাকাটা এখনও দুশ্চিন্তার কারণ। |
তবে তা-ও কমার মুখ নেওয়ায় শিল্পোৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার স্বার্থে ও আর্থিক বৃদ্ধি কিছুটা বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আর সুদ বাড়ানোর পথে না-ও হাঁটতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সরাসরি কোনও ইঙ্গিত না-দিলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে সুদ বাড়ানোর ফলেই কমেছে লগ্নি ও শিল্পোৎপাদন। যা বিশেষ ভাবে উদ্বেগের, কারণ তা কর্মসংস্থান কমিয়ে দেবে।” উল্লেখ্য, ২০১০-এর মার্চ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ পর্যন্ত ১৩ দফায় সুদের হার বাড়ানোর জেরেই বেড়েছে শিল্প-ঋণের খরচ, কমেছে নগদের জোগান, নেমে এসেছে উৎপাদন। অক্টোবরে ঋণনীতির পর্যালোচনাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়েছিল, মূল্যবৃদ্ধির চাপ আর না-বাড়লে তারা সুদ না-ও বাড়াতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬.৯ শতাংশে। এত দিন শিল্পোৎপাদন বাড়ার হার কমলেও এ বার কমেছে উৎপাদনই। ফলে সুদ বাড়ানোয় ছেদ টানা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী বলেছেন, আর সুদ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন না। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন, সম্ভবত শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদের হার একই রাখবে। তবে এ ব্যাপারে কিছুটা সন্দিহান অপর মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশী। তিনি বলেন, “২০১২-র প্রথম ত্রৈমাসিকে সুদ কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।” |