সরকারের প্রধান শরিক তথা রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে পরমাণু চুল্লি বসানোর ব্যাপারে এখনও আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তবে বিষয়টি নিয়ে এক পা-ও এগোনোর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে চায় কেন্দ্র। দ্বাদশ ভারত-রুশ সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের মস্কো সফরে যাওয়ার পথে বিমানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি না হলে যে হরিপুরের প্রকল্প নিয়ে এগোনো যাবে না, সে কথা মাথায় রেখেই তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জানান, কুড়ানকুলামে পরমাণু চুল্লি গড়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের বিষয়টি কেন্দ্র গুরুত্ব দিয়েই ভাবছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পৃথক কমিটিও গড়া হয়েছে।
তিস্তা জলচুক্তি থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ গত কয়েক মাসে সরকারের প্রধান শরিক দলের সঙ্গে বারবার সঙ্ঘাত বেধেছে মনমোহন সিংহ সরকারের। যার জেরে বারেবারেই সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। হরিপুরের ব্যাপারে তাই আর হাত পোড়াতে চায় না কেন্দ্র। রাশিয়ার সঙ্গে পুরমাণু সহযোগিতা অটুট থাকবে জানিয়েও প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “দেশের মানুষের নিরাপত্তার বিনিময়ে কোনও পদক্ষেপ করবে না কেন্দ্র। কিন্তু দেশের সামগ্রিক উন্নতির স্বার্থেই পরমাণু শক্তি প্রয়োজন। তবে তা করতে হবে সার্বিক মতৈক্যের ভিত্তিতে।” |
মস্কো বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই |
কয়েক বছর আগেই হরিপুর, কুড়ানকুলাম-সহ দেশের কয়েকটি জায়গায় রুশ প্রযুক্তিতে পরমাণু চুল্লি বসানোর ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে সমঝোতা করেছে দিল্লি। এর মধ্যে কুড়ানকুলামে কাজ শুরু হয়েও তুমুল বিক্ষোভের মধ্যে পড়েছে। অন্য দিকে, হরিপুরে পুরমাণু চুল্লি বসানোর ব্যাপারে কোনও কাজই হয়নি। বিরোধী দলে থাকাকালীন এবং পরে সরকারে এসেও মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই হরিপুরে পরমাণু চুল্লি বসানোর প্রস্তাবে সায় দেবেন না। অগস্টে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তও বিধানসভায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার হরিপুরে পরমাণু চুল্লি বসাতে দেবে না। রাজ্যের শাসক দল তথা কেন্দ্রের প্রধান সহযোগী দলের এমন মনোভাব জানার পরেও অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হরিপুর নিয়ে আশাবাদী। একই রকম ভাবে কুড়ানকুলাম নিয়েও আশাবাদী তিনি। সে কারণে মস্কোর যে সংস্থাটির সঙ্গে এই চুল্লি বসানোর ব্যাপারে দিল্লির চুক্তি হয়েছে, তারা বারবার বলা সত্ত্বেও হরিপুর বা কুড়ানকুলামের বদলে অন্য কোনও জায়গার নাম দেননি মনমোহন।
ভারতে পরমাণু চুল্লি বসানোর কাজে লাগাতার বিক্ষোভে সমস্যায় রাশিয়াও। এ নিয়ে গত কয়েক বছরে তারা বারবার দিল্লিকে চাপ দিয়েছে। ক্রেমলিনের তরফেও দিল্লিকে চাপে রাখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রুশ প্রধানমন্ত্রী পুটিন নিজের দেশেই গণবিক্ষোভে কিছুটা কোণঠাসা। অভ্যন্তরীণ সমস্যার জেরে রাশিয়াও তাই বিষয়টি নিয়ে ভারতের উপরে এখনই চাপ বাড়াচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আজ মস্কোর বিমানে ওঠার আগে জানিয়ে দেন, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পরমাণু সহযোগিতা আগের মতোই বজায় থাকবে। কিছু সমস্যা হলেও পরমাণু সমঝোতার ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে হওয়া আগের চুক্তি যে ভাঙবে না, তা স্পষ্ট করে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের মানুষের নিরাপত্তার বিনিময়ে কোনও পদক্ষেপ করবে না কেন্দ্র। কিন্তু দেশের সামগ্রিক উন্নতির স্বার্থে পরমাণু শক্তি প্রয়োজন।”
এ বারের সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা চালাবে ভারত-রাশিয়া। চন্দ্রায়ন-টু ছাড়াও একাধিক প্রকল্পে দু’দেশ হাতে হাত মিলিয়ে এগোচ্ছে। এ বারের সফরে মনমোহনের অন্য একটি মাথাব্যথা রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে ব্রিটেন-আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করুক, চায় না ভারত। রাশিয়া চায়, ওই দুই দেশ সেনা প্রত্যাহার করুক। মনমোহন আগামি কালের বৈঠকে পুটিনকে বোঝাবেন, সেনা প্রত্যাহারের পরে কাবুলের পরিস্থিতি যাতে দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, তার জন্য যৌথ ভাবে এগোনো দরকার। এ ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে কথা বলেই কৌশল স্থির করতে চায় দিল্লি। |