সাত দিনের মধ্যে অগ্নি নির্বাপনের যথাযথ ব্যবস্থা করা না হলে নার্সিংহোম মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের দশটি নার্সিংহোম ঘুরে দেখার পরে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দমকলের ওসি (সদর) তপন মুখোপাধ্যায়।
আমরি-তে অগ্নিকাণ্ডের পরে শুক্রবারই শহরের দশটি নার্সিংহোম পরিদর্শন করেছিলেন তপনবাবুরা। এ দিন দুপুরে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে ফের তিনি পরিস্থিতি দেখতে বেরোন। দু’দফায় এই ২০টি নার্সিংহোম পরিদর্শনের পরে বর্ধমানের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, “নার্সিংহোমগুলিই অসুস্থ।”
দমকলের ওসি বলেন, “এই ২০টি নার্সিংহোমই নিরাপত্তাহীন ভাবে চলছে। এগুলিকে সাত দিনের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির আকারে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা না হলে নার্সিংহোমের মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে।” তবে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মীনার দাবি, “নার্সিংহোমের মালিকদের থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি। ওঁরা এই বেহাল পরিকাঠামো বদলাতে চান।”
এ দিন দুপুরে তপনবাবুরা প্রথমে যান ভাঙাকুঠিতে নেহরু স্কুলের কাছাকাছি একটি নার্সিংহোমে। জি টি রোডের উপরে ওই নার্সিংহোমে কার্যত অগ্নি নির্বাপনের কোনও ব্যবস্থাই দেখা যায়নি। এর পরে নারকেলবাগানে পরপর দু’টি নার্সিংহোমে গিয়েও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন কর্তারা। দু’টি নাসিংহোমেই দেখা যায়, ছোট-ছোট খুপরি ঘর।
|
দেয়ালের কোণে অচল অগ্নি নির্বাপক। উঠতে নামতে সম্বল সরু খাড়া সিঁড়ি। যেখানে-সেখানে খোলা তার। এক পাশে চলছে রান্না। জ্বলছে গ্যাস বার্নার বা হিটার। ভরা গ্যাস সিলিন্ডার এবং কেরোসিনের জারও রয়েছে।
নার্সিংহোমগুলির মালিকদের ডেকে দমকলের ওসি বলেন, “সাত দিনের মধ্যে অগ্নি নির্বাপনের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করলে আপনাদের জেলে যেতে হবে। ব্যবস্থা করে আমাদের জানান। আমরা এসে দেখব। দেখে যদি সন্তুষ্ট না হই, তা হলেও ফের কিছু দিন সময় দিতে পারি। কিন্তু একেবারে কিছুই না করলে আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বলেন, “আমরা যতগুলি নার্সিংহোম পরিদর্শন করেছি তাতে মনে হয়েছে, এরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রক্ষার ন্যূনতম নিয়মকানুন মানে না।” তা হলে স্বাস্থ্য দফতর এদের লাইসেন্স দিল কী করে? স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা, “আসলে লাইসেন্স দেওয়ার আগে আমরা নার্সিংহোম পরিদর্শন করি। তখন তারা এক ধরনের পরিকাঠামো দেখায়। আজ আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে কিন্তু তার চিহ্ন মাত্র দেখতে পাইনি। ফের পরিদর্শনে আসব।”
নারকেলবাগান মোড়ের একটি নার্সিংহোমের মালিক রামকৃষ্ণ মল্লিক মেনে নেন, “অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর আমাদের নাসির্ংহোম চলছে। তবে এ বার আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” ওই এলাকারই অপর একটি নার্সিংহোমের মালিক সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “এত দিন এই সব করতে হয়নি। কিন্তু আমরি-র ঘটনায় আমরাও বিচলিত। এখানেও এ রকম কিছু ঘটুক তা চাই না। দমকল ও পুলিশের পরামর্শ মেনেই আমরা অগ্নি নির্বাপন সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেব।”
তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন নার্সিংহোম মালিকের বক্তব্য, এত দিন দমকলের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়াই নার্সিংহোম চলেছে। স্বাস্থ্য দফতর মাথা ঘামায়নি। এখন রাতারাতি সিঁড়ি চওড়া করা বা একটির বদলে দু’টি সিঁড়ি তৈরি করতে বললে তা সম্ভব নয়। শহরের নার্সিংহোমে দিনে ৫০ টাকার বেশি শয্যা ভাড়া দিতে চান না বেশির ভাগ রোগী। কিন্তু যথাযথ অগ্নি নিরোধক পরিকাঠামো গড়তে যে খরচ হবে তা-ও শেষে রোগীদের ঘাড়েই চাপবে।
জেলার নার্সিংহোম ও শপিং কমপ্লেক্সগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার দাবি তুলে এ দিনই বর্ধমান থানায় বিক্ষোভ দেখায় জেলা কংগ্রেস এবং শহর আইএনটিইউসি। বিকেলে মোমবাতি মিছিল বের করা হয়। |