হাসপাতালের প্রায় সমস্ত বিভাগেই রয়েছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। সব মিলিয়ে ৪৬টি। তবে সব ক’টিই মেয়াদ-উত্তীর্ণ। তা-ও আবার বছর তিনেক আগে। অর্থাৎ, আগুন লাগলে কোনও কাজে আসবে না এই যন্ত্রগুলি। আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের কার্যত জতুগৃহের দশা। হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের দাবি, মাস তিনেক আগেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে সুপারের দায়িত্বে এসেছেন নিখিলচন্দ্র দাস। তিনি জানান, হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার কী হাল, তা তাঁর পক্ষে বিশদে বলা সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেন, “হাসপাতালের কোনও কোনও জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের যা দশা, শর্ট সার্কিট হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুতের লাইন-সহ হাসপাতাল ভবনের নানা বিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের প্রতি সপ্তাহে আসা উচিত। অথচ এখানে আসার পর থেকে দেখছি, ওই দফতরের কেউ আসেন না। তাই হাসপাতালের এমন অবস্থার কথা তাঁদের না জানারই কথা।”
বর্তমানে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ শ্যামল সান্যাল জানান, জুলাইয়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে থাকাকালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক করতে যে খরচ হবে, তার হিসাব পাঠিয়েছিলেন। তিনি জানান, ৪৬টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ তিন বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সব ক’টি কিনতে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা প্রয়োজন। না কিনে ‘রিফিল’ করতে খরচ হবে ৬৫ হাজার টাকা। লিখিত ভাবে এ কথা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হলেও তহবিল অনুমোদন হয়ে আসেনি।
|
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নানা জায়গায় লাগানো রয়েছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। কোথাও কোথাও আবার ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। কোনও জায়গায় বিদ্যুতের ‘জয়েন্ট বক্স’-এর মুখ খোলা। দোতলায় ওঠার সময়ে আবার চোখে পড়ে মিটার বক্সের কাছে মেইন স্যুইচ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে। পাশে তিনটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। প্রয়োজনের সময়ে অবশ্য সেগুলির কাজে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, সব ক’টিই ফাঁকা।
শ্যামলবাবুর অবশ্য দাবি, হাসপাতালে বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই। কারণ, এলাকায় বহুতল বিশেষ নেই। হাসপাতাল খোলামেলা জায়গায় হওয়ায় প্রয়োজনে দমকলের গাড়ি অনায়াসে ঢুকতে পারবে। জলেরও অভাব হবে না। তা ছাড়া, বিপদ হলে হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে যাওয়ার জন্য অনেকগুলি দরজা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি এ কথা জানালেও বস্তুত হাসপাতালে বড় কোনও জলাধার নেই।
আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ফায়ার লাইসেন্স আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “এত দিন এ সব নিয়ে কারও কোনও হুঁশ ছিল না। সোমবার ডেপুটি সিএমওএইচ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক করতে খরচের হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছেন।” দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ বলেন, “আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল-সহ তিন জায়গা থেকে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে শুধু বলেন, “খরচের আনুমানিক হিসেব পাঠাতে বলা হয়েছে। তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে যান মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টোরাজ, দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ, পুরসভার দুই বাস্তুকার। পরিদর্শন শেষে তাঁরা জানান, হাসপাতালে আপতকালীন রাস্তা নেই। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে চলছে রান্নাঘর। আবর্জনা পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। অরিতাদেবী বলেন, “যে সব অনিয়ম রয়েছে, তা দ্রুত ঠিক করতে বলেছি।” দমকলের ওসি বলেন, “অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলি ঠিক করতে ও জলাধার গড়তে বলা হয়েছে।’’ ফায়ার লাইসেন্সের জন্য পুরসভাকে হাসপাতাল ভবনটির কাগজপত্র দমকলের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ দিন আসানসোলের সেনর্যালে রোডে একটি নার্সিংহোমেও পরিদর্শন হয়। অগ্নি নির্বাপণের জন্য নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানি গিয়েছে। |