অগ্নিবিধি শিকেয়, রোগী ভর্তি বন্ধ নাইটিঙ্গেলে
তিন মাস আগে ফায়ার সেফটি লাইসেন্স বা অগ্নি-লাইসেন্স নবীকরণের কথা ছিল। করা হয়নি। দমকল বিধি না-মানায় শেক্সপিয়র সরণির ‘নাইটিঙ্গেল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেয়ার সেন্টার’ হাসপাতালে রোগী ভর্তিই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আজ, বুধবার হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিস পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান মঙ্গলবার জানান।
দমকলের উচ্চ পর্যায়ের দল (ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি) মঙ্গলবার ওই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে ওই দলের প্রতিনিধিরা দেখেন, হাসপাতাল চালানো হচ্ছে অগ্নি নিরাপত্তা লাইসেন্স ছাড়াই। অথচ সেপ্টেম্বরেই অগ্নি-লাইসেন্স নবীকরণের কথা ছিল। সেই সময় দমকল বিধি মেনে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছিল হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তাঁরা তা মানেননি।
ফায়ার সেফটি অডিট কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেন দমকলমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দমকল বিধি মেনে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না-করা পর্যন্ত রোগী ভর্তি বন্ধ থাকবে। যাঁরা এখন ভর্তি আছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিতে বলা হবে।”
খতিয়ে দেখা হচ্ছে ‘নাইটিঙ্গেল’-এর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতাল কয়েকটি পর্যায়ে অগ্নি নির্বাপণের বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে বলে এ দিন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি। সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যদি দেখা যায় যে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা হলে সরকার ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। হাসপাতালের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার রমেন্দ্রনাথ বসু জানান, সরকার তাঁদের আপাতত রোগী ভর্তি বন্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু কোনও সরকারি নোটিস পাননি তাঁরা।
দমকলের অতিরিক্ত ডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাস জানান, নাইটিঙ্গেলকে আগেই কিছু ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন ওখানে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল, যা সুপারিশ করা হয়েছিল, তার অধিকাংশই মানা হয়নি। সেই অর্থে দমকলের বিনা অনুমোদনেই ওই হাসপাতাল চলছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিনিধিদলের এক সদস্য। তিনি জানান, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন, এক মাস এবং ছ’মাস তিনটি সময়সীমার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সুপারিশ যে মানা হয়নি, এত দিন দমকল সেটা দেখেনি কেন? ঢাকুরিয়ার আমরিতে অগ্নিকাণ্ড না-ঘটলে দমকলের তরফে এই পরিদর্শন হত কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, শাস্তি হিসেবে হাসপাতালে যদি রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে দমকলের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?
দমকলের এডিজি দেবপ্রিয়বাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এখন ওই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা ঠিক কেমন?
শুরু করা যাক হাসপাতালের সদর দরজা দিয়ে। আগুন লাগলে দমকলের বড় গাড়ি সেখানে ঢুকতেই পারবে না। হাসপাতালের প্রবেশপথ ৩.১ মিটার চওড়া। দমকলের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, ওই প্রবেশপথ কমপক্ষে ৩.৫ মিটার চওড়া হতে হবে। আর মই লাগানো দমকলের গাড়ি ঢোকার জন্য প্রবেশপথ অন্তত ৪.৫ মিটার চওড়া হওয়া চাই।
হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, বেসমেন্ট-সহ পাঁচতলা নিয়ে ওই হাসপাতাল। কিন্তু কোথাও আগুন লাগলে তা চট করে বোঝার কোনও উপায় নেই। কারণ, ‘স্মোক ডিটেকশন ডিভাইস’ বা ধোঁয়া বেরোলে যে-যন্ত্র বেজে ওঠে, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় তা লাগানোই হয়নি। হাসপাতালের বেসমেন্টের অধিকাংশ এলাকা গাড়ি রাখার জন্য ব্যবহৃত হলেও সেখানে কয়েকটি অফিস রয়েছে। কিন্তু সেখানে ‘ওয়াটার স্প্রিংকলার’ বা জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর যন্ত্র লাগানো হয়নি।
আগুন লাগলে নার্স, ওয়ার্ড বয়, আরএমও বা নিরাপত্তারক্ষীরা ভর্তি থাকা রোগীদের কী ভাবে উদ্ধার করবেন, নাইটিঙ্গেলে তার প্রশিক্ষণ বা মহড়ার ব্যবস্থাও নেই বলে দমকলের প্রতিনিধিরা জানান। এমনকী রোগীদের উদ্ধার করার জন্য কী পরিকল্পনা বা কৌশল গ্রহণ করা হবে, তা-ও দমকল বিভাগকে জানাননি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
দমকল জানায়, পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু আগুন নেভানোর কাজেই ব্যবহার করার জন্য কোনও জলাধার নেই। ধোঁয়া বেরিয়ে বাতানুকূল যন্ত্রের পাইপ দিয়ে তা ছড়িয়ে পড়লে তা আটকানোর ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে প্রতি তলায় জানান দেওয়ার ব্যবস্থা (পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম) নেই। জলের চাপ বেশি করার জন্য ‘বুস্টার পাম্প’ নেই।
দমকলের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জানান, আগুন নেভানোর যন্ত্র ব্যবহার করা দূরের কথা, আগুন লাগলে কোন নম্বরে ফোন করে দমকল বা পুলিশকে জানাতে হবে, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী বা নার্সেরাও এ দিন তা জানাতে পারেননি। তাঁরা শুধু জানিয়েছেন, দমকল ও থানার নম্বর খাতায় লেখা আছে। আগুন লাগলে খাতা দেখে নম্বর টুকে নিয়ে পুলিশ বা দমকলকে তাঁরা ডেকে নিতেন!

অনিয়মের বহর
• অগ্নি নিরাপত্তা লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি।
• প্রবেশপথ সঙ্কীর্ণ। দমকল ঢুকতেই পারবে না।
• ধোঁয়া-ঘন্টি নেই সর্বত্র।
• আগুন লাগলে প্রতি তলায় জানান দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
• দমকল বা পুলিশ ডাকার ফোন নম্বর জানাতে পারেননি রক্ষী বা নার্সেরাও।
• রোগী উদ্ধারে নার্স, ওয়ার্ড বয়, আরএমও বা রক্ষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.