সরকারি হাসপাতালেও হেলদোল নেই নিরাপত্তায়
বাঘাযতীনে দু’টি লন্ড্রি, জানেই না দমকল, স্বাস্থ্যবিভাগ
মরির ঘটনার পরে অগ্নিবিধি নিয়ে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে স্বাস্থ্য দফতর। বিভিন্ন হাসপাতালে আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ছুটছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। অথচ খাস কলকাতারই একটি সরকারি হাসপাতালের বেসমেন্টে চলছে দু’-দু’টি লন্ড্রি ইউনিট! স্বাস্থ্য দফতর, দমকল বা জাতীয় গৃহ নির্মাণ নির্দেশিকা (এনবিসি) প্রত্যেকের নিয়মেই যা চূড়ান্ত বেআইনি। সেটি বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল।
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই হাসপাতালেই আচমকা পরিদর্শনে এসে পরিষেবা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর আউটডোর-সহ অন্য পরিষেবা উন্নত করার জন্য অনেক পরিকল্পনা হয়েছে। এসেছেন স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ পরিদর্শকও। কিন্তু সেখানকার বেসমেন্টের দু’টি লন্ড্রির দিকে নজর যায়নি কারও। শহরের পাঁচটি প্রধান হাসপাতালের মতো বাঘাযতীন হাসপাতালেরও ফায়ার লাইসেন্স নেই। তাই আলাদা করে এই লন্ড্রির জন্যও দমকল থেকে কোনও অনুমতি বা লাইসেন্স নেওয়ারই প্রয়োজন মনে করেননি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। আমরির ঘটনার পরে সরকারি হাসপাতালে কেন স্বাস্থ্য দফতর কোনও পরিদর্শন চালাল না, এখন সেই প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতালের বেসমেন্টে এই মেশিনগুলিতেই চলে জামাকাপড় ধোলাই। ছবি: সুদীপ আচার্য
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে (পিপিপি) বছর পাঁচেক আগেই হাসপাতালের কাপড়-জামা-বিছানা কাচার দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়। তারা বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বেসমেন্টে দু’টি লন্ড্রি তৈরি করে। কিন্তু লন্ড্রির বড় বড় যন্ত্র এবং অন্য সামগ্রী যে বেসমেন্টের অধিকাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে, তা তাঁদের নজর কী ভাবে এড়িয়ে গেল, এখন সেই প্রশ্নের জবাব দিতে নাজেহাল স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
স্বাস্থ্য দফতরের পিপিপি বিভাগের এক শীর্ষকর্তার যুক্তি, “ওটা তো মেকানাইজড লন্ড্রি। সঙ্গে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্যরাও ঘুরে গিয়েছেন। ওখানে ওয়াশিং মেশিন ছাড়া তো কিছু নেই। তাতে ক্ষতি কিছু আছে বলে মনে হয় না।” দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা ওই স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা উড়িয়ে বলেছেন, “হাসপাতালের বর্জ্য ছাড়া আর কোনও ব্যাপার দেখার অধিকারই নেই আমাদের। হয়তো কোনও সময় হাসপাতালে বর্জ্য সরানোর প্রক্রিয়া দেখতে গিয়ে আমাদের সদস্যরা লন্ড্রিতে গিয়েছেন। কিন্তু লন্ড্রির ব্যাপারে মন্তব্য তাঁরা করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ দমকলের অধীন।”
কিন্তু দমকল কোনও দিনই ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যায়নি! হাসপাতালের সুপার বিকাশ মণ্ডল বলেন, “আমরা মাঝে মাঝে ঘুরে দেখি। ওখানে শুধু ওয়াশিং মেশিন আছে। সে তো এখন সকলের বাড়িতেই থাকে। তাতে অসুবিধা কিছু নেই।” দমকলের বক্তব্য কী? দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর বিভাস গুহ বলেন, “বেসমেন্টে কার পার্কিং ছাড়া আর কিচ্ছু থাকার কথা নয়। হাসপাতালে তো একেবারেই নয়। সব বেআইনি। বেসরকারি হাসপাতালগুলি কার পার্কিংয়ের লাইসেন্স নিয়ে সেখানে অন্য অফিস করে, জিনিসপত্র রাখে। আর সরকারি হাসপাতাল তো লাইসেন্স নেওয়ার মধ্যেই নেই! তারা কোথায় কী রাখছে আমরা জানতেই পারি না।”
দমকল কর্তারা আরও বলেছেন, বেসমেন্টে ইলেকট্রিক ওয়্যারিং থাকা বা বেশি মানুষের জমায়েত বেআইনি। সরকারি হাসপাতালের বেসমেন্টের লন্ড্রিতে সেই দু’টোই আছে। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল বড়-বড় মেশিন চলছে। গোটা ৩০ লোক কাজ করছেন। কোথাও কোনও আগুন নেভানোর যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নেই। আগুন লাগলে কী ভাবে নেভাবেন, জিজ্ঞাসা করলে কর্মীরা কিছুই বলতে পারলেন না। কাপড় যে হেতু দাহ্য বস্তু, তাই আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। বেসমেন্টে ঢোকা ও বেরনোর একটাই রাস্তা। আগুন লেগে তা বন্ধ হলে কী হবে, কেউ জানে না।
আমরির অগ্নিকাণ্ডেও ঘুম ভাঙেনি রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.