দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ‘অক্ষুণ্ণ’ রাখতে তিনি যে ‘কড়া’ হবেন, ফের তা জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাঁর ‘সতর্ক-বার্তা’, কেউ সংগঠন বা সরকারের ‘বদনাম’ হওয়ার মতো কাজ করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। সেই সূত্রেই মমতা দলীয় বৈঠকেও সিন্ডিকেট প্রসঙ্গও এনেছেন। দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বৈঠকের পর প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সিন্ডিকেট-ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত না-থাকার কথা দলনেত্রী বলেছেন।” দলীয় সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ফের পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ব্যক্তিগত ব্যবসা কেউ করতেই পারেন। কিন্তু দলে থেকে কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে চলবে না।
সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করার কথা বলেছিলেন। মঙ্গলবার দলের কাউন্সিলর, বিধায়ক ও কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন জেলার পুর চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে দলীয় সংগঠনকে মজবুত করতে বেশ কিছু ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন মমতা। বস্তুত, এর মাধ্যমেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরে পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলন করবে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যই মমতার বক্তব্যে ধরা পড়েছে বলে দলের একাংশের অভিমত। মমতা বৈঠকে বলেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে তিনি ‘স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত’ করতে চান। পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্র কায়েম না-করারও ‘নির্দেশ’ দেন। বৈঠকে দলীয় কর্মীদের ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ গড়ার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। বৈঠক-শেষে সুব্রতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান, তিনি মানুষকে স্বচ্ছ প্রশাসন এবং দল উপহার দিতে চান। সরকারে আছি বলেই আমাদের নেতা-কর্মীদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এমন কিছু কাজ করা যাবে না, যা দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতা বলেন, কোথায় কে কী ধরনের ‘দুর্নীতি’ করছে, তার খবর তাঁর কাছে আসছে। কেউ যেন এমন কোনও ‘গর্হিত’ কাজ না-করেন, যাতে তাঁকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়। সিন্ডিকেট-ব্যবসার সঙ্গে দলের জনপ্রতিনিধি যুক্ত থাকতে পারবেন না বলেও সাফ জানান মমতা। রাজারহাট-কাণ্ডের প্রেক্ষিতেই তাঁর এমন নির্দেশ বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা। প্রসঙ্গত, মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় উন্নয়নের সমস্যা সংক্রান্ত বক্তব্য তৃণমূল বিধায়কেরা এ বার থেকে মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে জানাবেন। তিনি তা পৌঁছে দেবেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। একই ভাবে দলের কোনও সমস্যা জানাতে হবে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে। |