সরকারি কর্মী নিয়োগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পাশাপাশি এ বার কাজ করবে রাজ্যের নিজস্ব স্টাফ সিলেকশন কমিশন। সেই মর্মেই মঙ্গলবার বিল পাশ হল বিধানসভায়। সরকারের বক্তব্য, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির রাজ্য সরকারি কর্মী নিয়োগে গতি আনতে এবং ওই প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখতে এই কমিশন তৈরি হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের অবশ্য দাবি, নতুন ওই কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগে ‘দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও দলতন্ত্র’ই প্রশ্রয় পাবে। এ দিন বিধানসভায় ভোটাভুটিতে বিলটি পাশ হয়। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন বিল, ২০১১’ নামে ওই বিলে বলা হয়েছে, সরাসরি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে-থাকা দফতরের বিল হলেও সেটি বিধানসভায় পেশ করেন পরিষদীয় দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিলের সমর্থনে যুক্তি দেন তৃণমূলের আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো। মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে আলিমুদ্দিনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ভাবে কোনও নিয়োগ হয়নি। নয়া সরকারের আমলে নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বিলের সাহায্যে।”
বিরোধীদের অভিযোগ, পিএসসি-কে না-জানিয়ে বা ওই সংস্থার দায়িত্ব সংক্রান্ত সরকারি আদেশনামা পরিবর্তন না-করে এই বিল আনা ‘বেআইনি’। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সব স্তরের কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব বর্তমানে পিএসসি-র। সেই আদেশনামা না-বদলে এই বিল আনার অর্থ স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কোনও কাজ থাকবে না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের জন্য যথাক্রমে প্রায় ১৪০০ ও ৩০০০ প্রার্থীর নাম পিএসসি বিধানসভা ভোটের আগে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ভোটের জন্য তখন নিয়োগ হয়নি। তার পরেও হয়নি। ওই তালিকা এড়িয়ে স্টাফ সিলেকশন কমিশন নতুন নিয়োগ শুরু করলে পিএসসি-র তালিকাভুক্তরা মামলা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আইনি জটিলতায় পড়বে নতুন বিল।”
নতুন বিলের ফলে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের কার্যত কোনও গুরুত্বই থাকবে না বলে অভিযোগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে বলেছেন ৩ মাসে দু’লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে, সেগুলি তা হলে কী ভাবে হল? তখন কোনও কমিশন লাগল না?” আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর প্রশ্ন তোলেন, “আমরি-র দুর্ঘটনা বা আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে চাকরি দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁদের তো আর কমিশনের পরীক্ষায় যাচাই করা যাবে না! সরাসরি নিয়োগ হবে। তার পরে আর কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য শূন্য পদ থাকবে?”
সূর্যবাবু অবশ্য বলেন, চিকিৎসক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, অডিট অ্যাকাউন্টস অফিসার প্রভৃতি পদে পিএসসি মারফৎ যথেষ্ট কর্মী মেলে না। এমন ক্ষেত্রে পিএসসি-র আওতার বাইরে গিয়েই যে কর্মী নিয়োগ করতে হবে, তা তিনি স্বীকার করেন। বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে সুব্রতবাবু বলেন, “এই বিলে পিএসসি বা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের গুরুত্ব কমবে না।” দুর্ঘটনায় মৃতের পোষ্য বা জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ বাবদ যে চাকরি পাবেন, তা কমিশনের আওতাভুক্ত থাকবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। |