পঞ্চায়েতের কাজ এবং ধান-আলু-পাট চাষিদের দুর্দশার প্রশ্নে মঙ্গলবার হইচই বাধল বিধানসভায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের চিঠি নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বক্তব্যের জেরে সরকারের ‘সমন্বয়হীনতা’র বিরুদ্ধে সরব হল বিরোধীরা। ধান কেনা নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিবৃতিতে বিরোধী বামফ্রন্টের পাশাপাশি ‘অসন্তোষ’ জানাল সরকারের শরিক কংগ্রেসও। এ সবের জেরে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে অস্বস্তিতে পড়তে হল সরকারকে।
কৃষকদের সমস্যা নিয়ে বিধানসভার অধিবেশনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সরব হওয়ার কথাই ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চিঠি নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে এ দিন সরকার পক্ষকে যেমন অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে, তেমনই তাদের ‘বিব্রত’ হতে হয়েছে ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহের কিছু মন্তব্য নিয়ে।
উল্লেখ পর্বে স্পিকারের আসনে বসেই সোনালিদেবী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজ নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৬ মাসের সরকারের কাজে ‘বাধা’ দেওয়ার অভিযোগ আনেন। স্পিকারের আসনে বসে সরকার পক্ষের হয়ে কেন মন্তব্য করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে হইচই বাধান বিরোধীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সভাকক্ষে চলে আসেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর মাইক্রোফোন নিজের দিকে ঘুরিয়ে মন্তব্য করে চলেন সোনালিদেবী। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রশ্ন তোলেন, স্পিকারের আসনে বসে জনসভা করা যায় নাকি? পরিষদীয় দফতরের দায়িত্বে-থাকা সুব্রত মুখোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত সোনালিদেবীকে নিরস্ত করেন। সরকারি সূত্রের খবর, ডেপুটি স্পিকারের আচরণে শাসক শিবির কিছুটা ‘বিব্রত’।
আরএসপি-র বিধায়ক নর্মদাচন্দ্র রায় জানতে চান, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের উপরে রাজ্য সরকার ঠিক কী নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে? প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সিপিএমের আনিসুর রহমান জানতে চান, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে পঞ্চায়েতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন? আনিসুরের প্রশ্নের জবাবে পঞ্চায়েত মন্ত্রী চন্দ্রনাথবাবু জানান, এমন কোনও চিঠির কথা তাঁর জানা নেই। কিন্তু ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ এনে বিরোধী দলনেতা ওই চিঠির প্রতিলিপি সভায় দেখান। সিপিএমের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা চিঠির প্রতিলিপি নিয়ে ছুটে যান স্পিকারের কাছে। ‘অস্বস্তি’ সামাল দিতে সুব্রতবাবু এবং সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ব্যাখ্যা দেন, ওই চিঠি এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাই পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানেন না। কিন্তু বিরোধীরা বলেন, কেন্দ্রের তরফে চিঠি তো এসেছে রাজ্য সরকারের কাছে। মন্ত্রীরা আলাদা আলাদা ভাষ্য দেন কী ভাবে? স্পিকার তখন পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন। পরে সুব্রতবাবু বলেন, “জয়রাম রমেশ যে চিঠি দিয়েছেন, ওই রকম অনেক চিঠিই রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে আসে। এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন হল, সরকারের চিঠি বিরোধীদের হাতে গেল কী করে? তার মানে প্রশাসনে সূর্যবাবুদের লোক রয়ে গিয়েছে! এর তদন্ত হওয়া দরকার!”
খাদ্যমন্ত্রী জানান, এ বার রাজ্যে রেকর্ড ১৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান হয়েছে। কংগ্রেসের অজয় দে প্রস্তাব দেন, ধান সংগ্রহে পৃথক একটি কমিশন গড়া হোক রাজ্যে। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এতে দৃশ্যতই ‘অসন্তুষ্ট’ হন কংগ্রেস বিধায়কেরা। পরে কংগ্রেসের প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান জানান, ন্যায্য দাম পাওয়ার জন্য চাষিদের দাবির সমর্থনে ৪ জানুয়ারি মেট্রো চ্যানেলে তাঁরা অবস্থান করবেন।
সভাকক্ষের বাইরে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ধান কেনা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। বিরোধীরা যা বলছেন, জেলায় জেলায় আমি বৈঠক করার সময় সেখানে হাজির হয়ে কেউ সে কথা বলেননি!” কিন্তু শরিক কংগ্রেসও তো একই কথা বলছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মন্তব্য, “দুর্ভাগ্যজনক!” |