ময়ার পরে পদ্মায় ভাঙনের প্রকোপ শুরু হল বয়রাতেও। ময়া লাগোয়া প্রায় দু’কিলোমিটার দূরের এই গ্রামেই রয়েছে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী তথা বিএসএফের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত চৌকি। সেই সীমান্ত চৌকি থেকে পদ্মা এখন মাত্র ১০ মিটার দূরে। গত দশ দিন থেকে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে পাথরে বাঁধানো স্পার। ফলে ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বয়রার এই সীমান্ত চৌকি থেকে বাংলাদেশ মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে। স্বাভাবিক ভাবেই সীমান্ত প্রহরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চৌকি। ইতিমধ্যেই নিজেদের চোখেই ভাঙনের অবস্থা দেখে গিয়েছেন ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ। ঘুরে গিয়েছেন রাজ্য সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ শাখার কর্তারাও। রাজ্য সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ বলেন, “ময়া লাগোয়া বয়রায় ভাঙন পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কিন্তু এই ব্যাপারে রাজ্য সেচ দফতরের কিছুই করার নেই। বয়রায় ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে দু’সপ্তাহ থেকে। |
লালগোলার বয়রাতে ভাঙনের প্রকোপ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |
ওই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের। রাজ্য সেচ দফতরের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর চৌকির গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছে।” ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্পের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “পদ্মায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধের একটি প্রকল্প কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই অনুমোদন এলেই কাজ শুরু হবে।” ফরাক্কা বাঁধের জেনারেল ম্যানেজার অরুণকুমার সিংহ বলেন, “ওই সীমান্ত চৌকিকে বাঁচাতে সব রকম ভাঙন রোধের কাজ করা হবে। কিন্তু কবে সে কাজ শুরু করা যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ড্যান্ট দীপক চৌবে বলেন, “ময়ার মতোই ভাঙনের গতি এতটাই তীব্র যে আমরা উদ্বেগে রয়েছি।” পদ্মায় এখন ওই এলাকায় পাড় বরাবর ৫০-৬০ ফুট জল রয়েছে। জলের ধাক্কায় নীচের দিকে মাটি আলগা হয়ে ধসে পড়ছে পাড়। দীপকবাবু বলেন, “ওই চৌকিতে ৪০ জন জওয়ান থাকেন। যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটে যেতে পারে।”
রঘুনাথগঞ্জ সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ শাখার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তুষার অধিকারী বলেন, “এই বিপদের কথা আমরা জানি। ফরাক্কা কর্তৃপক্ষ যে স্থায়ী ভাবে স্পার বাঁধানোর কাজ খুব দ্রুত শুরু করতে পারবেন, তা-ও মনে হয় না। তাই রাজ্য সরকারের তরফে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করব আমরাই। দু’তিন দিনের মধ্যেই সেই কাজ শুরু হবে।”
লালগোলা ব্লকের বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “ওই এলাকায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর একটি চৌকি থাকলেও সে ভাবে জনবসতি নেই। তাই ওই ভাঙন নিয়ে এখনও তেমন হইচই শুরু হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি সত্যিই বিপজ্জনক। সে কথা প্রশাসনের সব মহলেই জানানো হয়েছে।” এলাকার বাসিন্দা আসরাফ বলেন, “এর আগে পদ্মা ভাঙনের জন্য ওই চৌকিটা পাঁচ বার সরাতে হয়েছে। এ বার আরও একবার সরাতে হবে। তবে পদ্মা গর্ভে বহু গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। তাই উচিত এখনই ব্যবস্থা নেওয়া।” |