মলদ্বারের পাশে গভীর ক্ষত থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাতের জেরে মৃত্যু হল একটি স্ত্রী হাতির। সোমবার শিলিগুড়ির অদূরে মহানন্দা অভয়ারণ্যে সেবক রেল স্টেশনের অদূরে রেল লাইনের পাশের একটি গর্ত থেকে ওই স্ত্রী হাতিটির মৃতদেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। ঘটনাস্থলের চারপাশেও মিলেছে প্রচুর রক্ত। তবে কী ভাবে স্ত্রী হাতিটির শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হল তা নিয়ে বনকর্মীদের মধ্যে ধন্দ তৈরি হয়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই প্রায় ৩০-৩৫টি বুনো হাতির দল ঘোরাফেরা করছে। ওই দলের মধ্যে অন্তত দুটি দাঁতাল ‘মস্তি’তে রয়েছে বলে লক্ষ্য করেছেন বনকর্মীরা। তা থেকে বনকর্মীদের সন্দেহ, সঙ্গমে অনিচ্ছুক ওই স্ত্রী হাতিটির সঙ্গে কোনও দাঁতাল জোরাজুরি করতে গিয়ে মলদ্বারের পাশে দাঁত ঢুকিয়ে দিতে পারে। তার জেরেই অতিরিক্ত রক্তপাত হয়ে স্ত্রী হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। বন্যপ্রাণ বিভাগের দার্জিলিঙের ডিএফও সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “মস্তিতে থাকা দাঁতাল স্ত্রী হাতির উপরে দাঁতাল এ ধরনের হামলা করতে পারে। তাতে মলদ্বারের পাশে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া আশ্চর্য নয়। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বনকর্মীরা হাতিটির দেহ উদ্ধারের পরে ময়না তদন্তের প্রস্তুতি নিলেও ওই এলাকায় ঘুরে বেড়ানো বুনো হাতির দলটির তাণ্ডবে তা সম্ভবই হয়নি। বনকর্মীরা জানান, যতবারই তাঁরা মৃত হাতিটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, বুনো হাতির পাল তাঁদের দিকে তেড়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত পটকা ফাটিয়ে বুনো হাতির পালটিকে গভীর জঙ্গলে সরানোর পরে ময়না তদন্ত শুরু করা হলেও সেদিন মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়নি। মঙ্গলবার সকালে মৃত হাতির দেহটি ভাল করে পরীক্ষা করার সময়ে মলদ্বারের কাছে প্রায় এক ফুট গভীর ওই গভীর ক্ষতচিহ্নটি নজরে পড়ে। মলদ্বারের ভিতর থেকে জমাট বাঁধা রক্ত মেলে। বনকর্মীরা জানান, মৃত স্ত্রী হাতিটির স্তনে এখনও দুধ রয়েছে। যার অর্থ, হাতিটি শাবক নিয়ে ওই বুনো হাতির পালের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে। শাবক যতদিন দুগ্ধপোষ্য থাকে, ততদিন স্ত্রী হাতি সাধারণত প্রজননে অংশ নেয় না। অন্যদিকে, প্রজননের প্রবল ইচ্ছেয় কোনও দাঁতাল অস্থির হয়ে পড়লে সেই পরিস্থিতিকে ‘মস্তি’ বলা হয়। এই সময়ে দাঁতাল হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেই জন্যই এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা বনকর্মীদের। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকালে বনরক্ষীরাই প্রথম বুনো হাতির পালটিকে নজর করতে গিয়ে ওই স্ত্রী হাতিটিকে গর্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সুকনা এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে যান। খবর দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তিকে। তাঁরই নির্দেশে পশু বিশেষজ্ঞ মলয় মাইতিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাতিটির শরীরে বিষক্রিয়ায় কোনও চিহ্ন মেলেনি। পেটেও যথেষ্ট পরিমাণ খাবার ছিল। ডিএফও বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” |