সম্পাদকীয় ২...
দায়
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন, তিনি কুরুক্ষেত্রের রথী-মহারথী সকলকে মারিয়াই রাখিয়াছেন, অর্জুন তাঁহাদের মৃত্যুর নিমিত্তমাত্র হইবেন। এ যুগে এ কথা বলিতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের দমকল বিভাগের কর্তারা। তাঁহাদের অসামান্য কর্মতৎপরতায় এ রাজ্যের হাসপাতাল, প্রেক্ষাগৃহ, মহাবিপণিগুলি জতুগৃহ হইয়াই রহিয়াছে, যে কেহ কোনও মতে আগুনের একটি ফুলকি বাহির করিতে পারিলেই হইল। দমকল-প্রভুরা এ যুগের কল্পতরু, যাঁহারা নিরাপত্তার ছাড়পত্র পাইবার অধিকারী নহেন, তাঁহাদেরও শূন্য হাতে ফিরিয়া দেন না। ‘শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন’ বলিয়া একটি অপরূপ বস্তু দমকল-কর্তারা আবিষ্কার করিয়াছেন, যাহার দ্বারা নিরাপত্তার সকল নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াও কোনও শাস্তি পাইবার আশঙ্কা কাহারও থাকে না। ‘শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন’ পাইয়া নির্বিচারে বহুতলের অভ্যন্তরে দাহ্য পদার্থ জমাইয়া রাখিতে পারা যায়, বৈদ্যুতিন ব্যবস্থাকে অসুরক্ষিত রাখিলে দোষ হয় না, আপৎকালীন বহিরাগমনের পথ স্তূপাকৃত জঞ্জাল দিয়া বন্ধ করিলেও শাস্তির আশঙ্কা নাই। দমকলের কর্তাদের কৃপায় ভিসুভিয়াস কিংবা ফুজিয়ামাও ‘নিরাপদ’ বলিয়া প্রমাণিত হইতে পারে, তাহাদের উপর বহুতল নির্মাণের ছাড়পত্র পাওয়া যাইতে পারে। তাঁহাদের সন্তুষ্ট করিবার উপায়গুলি জানা থাকিলেই হইল। এই মহাজনদের নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করিয়া হয়তো খুব শীঘ্রই চিকিৎসকরা ‘শর্তসাপেক্ষ মৃত্যু’ কিংবা শিক্ষকরা ‘শর্তসাপেক্ষ পাশ’-এর সনদ দিবেন।
দমকল বিভাগের এই অকর্মণ্যতা ও দুর্নীতি রাজ্য সরকার কি মানিয়া লইবে? ‘আমরি’ হাসপাতালের কর্তারা ইতিমধ্যেই হাজতবাস করিতেছেন। তাঁহাদের অপরাধ ক্ষমাহীন, সন্দেহ নাই। কিন্তু দমকল-কর্তারা কি ততোধিক অপরাধী নহেন? তাঁহারা কি আরও বৃহৎ প্রাণনাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া রাখেন নাই? বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড যে দিন ঘটিল, সে দিন সকলের মনে হইয়াছিল, ‘এই দুর্ঘটনা কেমন করিয়া ঘটিল?’ কিন্তু তাহার পর যতই অনুসন্ধান চলিতেছে, ততই যেন এক বিপরীত বিস্ময় জাগিয়া উঠিতেছে। ‘এত দিন দুর্ঘটনা ঘটে নাই কেন?’ গত তিন দিনে স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে যে, এ রাজ্যে নিরাপত্তার সরকারি বিধি-নিষেধগুলি বস্তুত ছেলে-ভুলানো ছড়া ব্যতীত কিছুই নহে। সেগুলি শুনাইলেই যথেষ্ট, প্রয়োগের প্রয়োজন নাই। এই মনোভাব অতি আশ্চর্য। দমকল বিভাগ কেবল একটি পরিষেবা-প্রদানকারী সংস্থা নহে, আর পাঁচটি সরকারি দফতরের সহিত তাহার তুলনা চলে না। একটি নকল রেশন কার্ড অনুমোদন করা, আর একটি মিথ্যা নিরাপত্তা সনদ দেওয়া, এই দুইটি এক স্তরের অপরাধ নহে। দ্বিতীয়টির উপর বহু মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে। অথচ গত কয়েক দিনে গণমাধ্যমে যাহা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট যে অন্যান্য বিভাগের ন্যায়ই দমকল দফতরের বাবুরা অবাধে নিয়মভঙ্গ করিয়াছেন। আমরি-কর্তাদের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত যদি ৯৪টি মৃত্যুর পর্যাপ্ত কারণ হইয়া থাকে, দমকল-কর্তাদের নীতিভ্রষ্টতা তাহার আবশ্যিক কারণ। হতভাগ্য নাগরিকদের স্মৃতিফলক নির্মাণ সরকারের কাজ নহে। সরকারি কর্মচারী জনস্বার্থ, জন-নিরাপত্তাকে তুচ্ছ করিলে কী শাস্তি হইতে পারে, তাহার দৃষ্টান্ত নির্মাণ করাই সরকারের কাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.