সম্পাদকীয় ১...
গৃহযুদ্ধের মুখে সিরিয়া
তিহাসে বরাবরই দেখা গিয়াছে, স্বৈরাচারীরা অনেকেই কিছু কাল শাসন চালাইবার পর দেশের ভিতরে ও বাহিরে গণতান্ত্রিক বৈধতা অর্জনের জন্য ব্যাকুল হইয়া ওঠেন। এ জন্য তাঁহারা লোকদেখানো নির্বাচনের আয়োজনও করেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি বিবর্তিত না-হওয়ায় এবং গণতন্ত্রের রীতি-পদ্ধতির অনুপস্থিতিতে সেই নির্বাচন হইয়া ওঠে প্রতারণামূলক, হাস্যকর। পশ্চিম এশিয়ার সিরিয়াতেও সেই দৃশ্যই প্রত্যক্ষ হইতেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ অবশ্য গত নয় মাস ধরিয়া ক্রমবর্ধমান প্রজাবিদ্রোহের মুখোমুখি হইয়া প্রেসিডেন্ট বা পার্লামেন্ট নির্বাচনের মতো কোনও বড় ধরনের জনাদেশ গ্রহণের ঝুঁকি লইতে চাহেন নাই। তাহার পরিণাম তাঁহার পক্ষে শুভ হইবে না, সেটা অনুমান করিয়াই তিনি পুর-নির্বাচনের আয়োজন করিয়া নিজের শাসনকে বৈধতা দিতে চাহিয়াছেন।
যখন সিরিয়ায় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব চলিতেছে, তখনও কিন্তু দেশের নানা স্থানে আসাদের সামরিক বাহিনীর ট্যাংক ও কামান ক্ষুব্ধ, বিদ্রোহী জনসাধারণের উপর গোলাবর্ষণ করিতেছে। বস্তুত, প্রতি দিনই নিহত বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়িতেছে। এবং বিক্ষুব্ধরা কেহই প্রেসিডেন্ট আসাদের কাছে নির্বাচিত পুরসভা চাহিতেছেন না, তাঁহারা একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা চাহেন, যাহা মঞ্জুর করিতে হইলে আসাদকে ক্ষমতা ছাড়িয়া রাজনৈতিক বনবাসে যাইতে হয়। অতএব তিনি সামরিক বাহিনী দিয়াই প্রতিবাদীদের জবাব দিতেছেন। এই দমননীতি বিশ্বের ধিক্কার কুড়াইয়াছে। আরব লিগের সদস্যরাষ্ট্রগুলি পর্যন্ত সিরিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাবে গত নয় মাসে আসাদের বাহিনী পাঁচ হাজার সিরীয় বিক্ষোভকারীকে হত্যা করিয়াছে। তবে প্রথম কয়েক মাসে যেমন নিরস্ত্র, নিরীহ জনসাধারণই কেবল হইতেছিলেন, এখন আর তাহা হইতেছে না। কেননা সিরীয় সেনাবাহিনীর বিক্ষুব্ধ অংশও প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতিপক্ষের সমর্থনে সক্রিয় ভাবে বিদ্রোহে যোগ দিতেছে। সিরিয়া কার্যত গৃহযুদ্ধের মুখে। কতকটা মুয়াম্মর গদ্দাফি শাসিত লিবিয়ার অনুরূপ পরিস্থিতি। কিন্তু লিবিয়ায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহ গোটা পশ্চিমী বিশ্ব যে ভাবে গদ্দাফি জমানার অবসানকল্পে কোমর বাঁধিয়া নামিয়া পড়িয়াছিল, সিরিয়ার বেলায় তেমন কোনও তৎপরতা এখনও দেখা যাইতেছে না। সত্য, মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন আসাদকে হুমকি দিয়াছেন। ব্রিটেনও কড়া কড়া বাক্যবাণ ছুড়িয়াছে। কিন্তু এই পর্যন্তই। সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোনও সামরিক তৎপরতার পরিকল্পনা এখনও রচিত হয় নাই। অথচ লিবিয়ার তুলনায় সিরিয়া অনেক বেশি মৌলবাদী ইসলামের প্রশ্রয়দাতা। লেবাননের হেজবুল্লা এবং গাজা-র আল-হামাসকে ইরানের পাশাপাশি সিরিয়াও প্রভূত অর্থ ও অস্ত্রসাহায্য দিয়া থাকে, প্রশিক্ষণও দেয়। লেবাননে ইসলামপন্থীদের সহিত যৌথ ভাবে ইজরায়েলকে প্রতিহত করার ব্রত হইতে সিরিয়া কখনও সরিয়া দাঁড়ায় নাই। লেবাননের গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী হারিরি-কে হত্যার পিছনেও যে সিরিয়ারই হাত ছিল, তাহাও প্রমাণিত। মার্কিন বিদেশ নীতির পরিভাষায় যাহাকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলা হয়, বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রে আবদ্ধ সিরিয়া তাহার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তথাপি সিরিয়ার বিরুদ্ধে এখনও আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে নড়িয়া বসিতে দেখা যাইতেছে না। বিশ্বের গণতন্ত্রীরা কি ভয় পাইতেছেন, আরব বসন্ত যে-ভাবে একের পর এক স্বৈরাচারীর পতন ঘটাইয়া ইসলামপন্থীদের অভিষেক সম্ভাবিত করিয়াছে, সিরিয়ায় ন্যাটোর হস্তক্ষেপও অনুরূপ কোনও অনভিপ্রেত পরিণামের জন্ম দিবে? সম্ভবত তাহাই। সিরিয়া কিন্তু কোনও ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র নয়, বরং ধর্মান্ধ ইসলামি সন্ত্রাসীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রূপেই তাহার পরিচয়। বাশার আল-আসাদের বিদায়ে আর যাহাই হউক, জেহাদি ইসলামের বিজয়কেতন নূতন করিয়া পশ্চিম এশিয়ায় উড়িবে না, কেননা আসাদ সেই কেতন উড়াইয়াই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণে অবতীর্ণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.