টাকার অভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারছে না, বিহার সরকার তখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধান কেনার জন্য ৮০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ করল। এই টাকা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ৬ হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। ধান কেনার কাজে যুক্ত সরকারি কর্মীদের ওই সময় পর্যন্ত ছুটিও বাতিল করেছে বিহার সরকার। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যের উন্নয়ন কমিশনার অশোক কুমার সিংহ শনিবার সব জেলাশাসককে এ নিয়ে নির্দেশ পাঠান।
ধান বিক্রির টাকা পেতে চাষিদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এ বার ‘সংগ্রহ মূল্য’ চেকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যিনি সরকারি কেন্দ্রগুলিতে ধান বিক্রি করবেন তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে। যাঁদের অ্যাকাউন্ট নেই তাঁদের ক্ষেত্রে জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে নিদের্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কার্যত চেকের মাধ্যমে ধান কেনা না হলে সংগ্রহ মূল্যের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের দেয় ভর্তুকি রাজ্যগুলি পাবে না। যার ফলে বিহার সরকারও ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ চেকের ব্যবস্থা করেছে। ধান কেনার সময়ই বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের হাতে ব্যাঙ্কের চেক দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
উন্নয়ন কমিশনার জানান, “এই ধান চাষিদের থেকে সরাসরি কেনার জন্য রাজ্য জুড়ে ৬ হাজার কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৭-৮ জন লোক থাকবে ধান কেনার জন্য। কোনও ফড়ে বা দোকানদারের মাধ্যমে সরকার ধান কিনবে না। এই ব্যাপারে রাজ্য কঠোর ভাবে নিয়ম মেনে চলবে।” ধান কেনার জন্য প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতির ৪৭৬৯ টি, রাজ্য খাদ্য নিগমের ১০৬৮টি এবং এফ সি আই-এর ৮০টি কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য উন্নয়ন কমিশনার প্রতি সপ্তাহে জেলাগুলিতে যাবেন। মুখ্যসচিব নবীন কুমার সপ্তাহ শেষে কোথায়, কতখানি ধান কেনা হল তা পর্যালোচনা করবেন।
বিহারে এ বার ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষি দফতর থেকে বলা হচ্ছে, চলতি মরসুমে রাজ্যে ৮০ লক্ষ টনের মতো ধান উৎপন্ন হবে। নালন্দা জেলা এ বার বিশ্বের মধ্যে ধান উৎপাদনে রেকর্ড করেছে বলে দাবি করে অশোকবাবু বলেন, “নালন্দা জেলায় এবার প্রতি হেক্টরে ২২৪ কুইন্ট্যাল ধান উৎপাদন হয়েছে।” রাজ্যের কৃষি দফতর এই খবর জানিয়ে কেন্দ্রকেও চিঠি লিখেছে। কমিশনার বলেন, “কেন্দ্রকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছি, এই জেলার ধান উৎপাদনকে বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে গণ্য করা হোক।” |