শুখায় জল সমস্যার সমাধানে সমীক্ষা
উত্তরের স্বার্থ অটুট রেখেই তিস্তা-চুক্তি
শুখা মরসুমে বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া আদৌও সম্ভব কি না খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে ভারত-বাংলাদেশের তিস্তা চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। দু দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে বেশি দিন এই চুক্তি স্থগিত রাখা যাবে না বলে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের ওপরে চাপ অব্যাহত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে দু দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সাক্ষরিত হলে আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের তরফে কতটা জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব তার সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বর্ষার সময়ে জল দেওয়া কোনও সমস্যা নয়। শুখার সময়ে তিস্তায় জলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের দাবি মতো জল দেওয়া সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুখার মরসুমে তিস্তার গতিপ্রকৃতি নিয়ে সমীক্ষা শুরু করেছেন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “বিগত কয়েক বছরে তিস্তার ওপরে একাধিক জল বিদ্যুৎ প্রকল্পে তৈরি হয়েছে। সেখানে নিয়মিত জলের জোগান চাই। তিস্তা প্রকল্পে ক্যানালের কাজ যত এগোবে তত বেশি পরিমাণ জল চাই। অন্যদিকে, গত কয়েক বছরে নদীতে ক্রমশ পলির পরিমাণ বাড়ছে। এগুলি আগে বোঝা যায়নি। সুতরাং চুক্তি করতে হলে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করতে হবে। সেই সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার কাজ চলছে।”
ছবি: সন্দীপ পাল
অন্যদিকে সমীক্ষা রাজ্য সরকার যে সমীক্ষা শুরু করেছেন তাতে প্রাথমিক ভাবে তিনটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে। প্রথমত, ক্রমশ তিস্তা নদীতে পলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় চর পড়তে শুরু করেছে। সমানুপাতিক হারে কমেছে জলের পরিমাণ। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বছরে ১০ মিলিয়ন টন পলি তিস্তা নদীতে জমে যা অনান্য নদীর তুলনায় অনেক বেশি। তিস্তা চুক্তির রূপরেখা তৈরির সময়ে নদীতে এই প্রবণতা ছিল না। দ্বিতীয়ত, শুখা মরসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মে মাসে তিস্তা নদীতে যা জল থাকে তা দিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। শিলিগুড়ি লাগোয়া জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শুখা মরসুমে জলের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। তৃতীয়ত, তিস্তা প্রকল্পের সেচ খালেও ফি বছর জানুয়ারি মাসের আগে জল ছাড়া সম্ভব হয় না। যে জল ছাড়া হয় তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সর্বোপরি তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের প্রথম উপপর্যায়ের কাজই এখনও শেষ হয়নি। সুতরাং ভবিষ্যতে তিস্তা প্রকল্পের কাজ যত এগোবে জলের চাহিদা তত বাড়বে। সেক্ষেত্রে শুখা মরসুমে দেশের তথা শিলিগুড়ি মহকুমা, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ উত্তর বঙ্গের অন্যান্য তিন জেলার স্বার্থ বজায় রেখে বাংলাদেশকে কতটা জল দেওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে তিস্তা নদীতে সমীক্ষা শুরু করেছে। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র সোমবার ও এদিন গজলডোবা, দোমহনী, হলদিবাড়ির বেলতলি এলাকায় তিস্তা নদীতে সমীক্ষা চালিয়েছেন। তিনি কলকাতায় ফিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেবেন। এদিন কল্যাণবাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের হাতে বেশি সময় নেই। দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।” সমীক্ষায় যে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেগুলি হল, শুখার মরসুমে গজলডোবায় তিস্তা ব্যারাজে কত পরিমাণ জল দেওয়া হয়। ব্যারাজ থেকে মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানালে কী পরিমাণ জল পাঠানো হয়। সেই জল পাঠানোর পরে কত জল অবশিষ্ট থাকে। করলা, ধরলার মতো নদীতে তিস্তা থেকে কী পরিমাণ জল আসে এবং ছোট উপনদীগুলি থেকে কত জল তিস্তায় পড়ে। কল্যাণবাবু বলেন, “গজলডোবা ব্যারাজ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি। কেন্দ্রীয় জল আয়োগের থেকে শুখা মরসুমে তিস্তায় জলের পরিমাণ নিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সে তথ্য দিল্লি থেকে পাঠানো হবে। সব তথ্য পাওয়ার পরেই চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হবে।” উত্তরবঙ্গকে বাঁচিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যে রাজ্যও তিস্তা চুক্তি করতে আগ্রহী তা জানিয়ে কল্যাণবাবু বলেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সমীক্ষা করতে এসেছি। আমরা দু’দেশের স্বার্থ রক্ষা করে এমন সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান করতে চাই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.