পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে ঘর গোছানোর চেষ্টা কংগ্রেসের
তৃণমূলের সঙ্গে কথা হয়নি, খাদ্য বিল পিছিয়ে গেল
খুচরো-বিতর্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে আর ঝুঁকি নিতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বরং তৃণমূল তথা শরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আরও আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে খাদ্য সুরক্ষা বিলে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি আজ পিছিয়ে দেওয়া হল।
সূত্রের খবর, এ প্রসঙ্গে মনমোহনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা ইউপিএ-র অন্যতম শরিক নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যে হেতু খাদ্য সুরক্ষা বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই এ ব্যাপারে দলের মধ্যে আলোচনা করে নীতিগত অবস্থান নেওয়ার জন্য তৃণমূলের আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তা ছাড়া রেল মন্ত্রকের অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে সংসদে আলোচনা চলায় রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দীনেশ ত্রিবেদী আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বৈঠকে বলেন, খুচরো-বিতর্ক সরকারকে একটা শিক্ষা দিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে ইউপিএ-র শরিক দলগুলির সঙ্গে আরও আলোচনা করে এগোনোই শ্রেয়। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, সবার মত নিয়েই খাদ্য সুরক্ষা বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। বস্তুত, এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগ জানান সরকারের আর এক শরিক কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। তাঁর প্রশ্ন, খরা হলে কী হবে? এই বিল পাশ হলে যে সরকারের ঘাড়ে বিরাট অর্থের বোঝা চাপবে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি গণবণ্টন ব্যবস্থা ভাল করার ওপরেও জোর দেন। লোকপাল থেকে খুচরোয় বিদেশি লগ্নি, সব বিষয়ে সরকারের পাশে ছিলেন পওয়ার। তাই তাঁর বক্তব্য গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন মনমোহন।
প্রথমে তিস্তা বিতর্ক এবং পরে খুচরো পর্বে সরকারের রাজনৈতিক ব্যবস্থাবনায় ‘গলদ’ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। দলের অনেক শীর্ষ সারির নেতা-মন্ত্রীরই বক্তব্য, যে হেতু তৃণমূল ইউপিএ-র অন্যতম বড় শরিক, তাই তাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বজায় রেখে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই কংগ্রেস তথা মনমোহন সরকার যে এখন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বদল আনতে চাইছে, সেটা আজকের ঘটনায় স্পষ্ট। তা ছাড়া ভবিষ্যতে শরিকদের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয় রেখে সরকারের নীতি নির্ধারণের যে আশ্বাস মনমোহন সম্প্রতি তৃণমূল নেতৃত্বকে দিয়েছিলেন, তারও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক শিবিরের মতে, শুধু আজকের ঘটনাই নয়, কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কের বরফ গলানোর সামগ্রিক একটা প্রয়াস দুই তরফেই শুরু হয়েছে। জঙ্গলমহল-সহ পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য চলতি সপ্তাহে কেন্দ্র প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার অনুদানে ছাড়পত্র দিয়েছে। তা নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় ইতিবাচক ঘটনা। তার পর গত শনিবার কলকাতার টাউনহলে মমতার সঙ্গে প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ বৈঠক হয়। পারস্পরিক সমঝোতা রেখে চলার বিষয়টি ওই বৈঠকেও উঠে আসে।
তৃণমূলের তরফেও যে কংগ্রেস তথা কেন্দ্রকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানো হচ্ছে, তার ইঙ্গিতও মিলছে। বিশেষ করে সামগ্রিক ভাবে লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের পাশেই থাকছে তৃণমূল। এমনকী, তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, পেনশন বিল নিয়েও দলের তরফে সংসদে বিশেষ বাধা দেওয়া হবে না। আবার কাল সংসদে কালো টাকা নিয়ে বিজেপি-র আনা মুলতুবি প্রস্তাবের আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের দিকে সংখ্যার হিসাব যাতে অটুট থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে তৃণমূল নেত্রী দলের সব সাংসদকে নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের তরফে হুইপ জারি করে কাল লোকসভায় দলের সব সাংসদকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, জোট সম্পর্কে কোনও কোনও বিষয় নিয়ে টানাপোড়েন থাকে ঠিকই। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, পারস্পরিক প্রয়োজনেই জোট হয়। এই মুহূর্তে কংগ্রেস এবং তৃণমূল উভয়রেই পারস্পরিক সাহায্য প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে সুশাসন কায়েম করতে মমতার যেমন কেন্দ্রের সাহায্য দরকার, তেমনই সংস্কার কর্মসূচি থেকে শুরু করে লোকপাল বিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও তৃণমূলের সমর্থন কংগ্রেসের কাছে অপরিহার্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.