পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে ঘর গোছানোর চেষ্টা কংগ্রেসের
লোকপাল থেকে সংস্কার, ঘুরে দাঁড়াতে কৌশলী কেন্দ্র
লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রীকে রেখে অণ্ণা হজারেদের আন্দোলনকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দেওয়া। পেনশন বিল নিয়ে বিজেপি-কে রাজি করিয়ে বিরোধী জোটে ফাটল ধরানো। খুচরো-বিতর্ককে পিছনে ফেলে ইউপিএ-র ঐক্যকে মজবুত করা। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে এই ত্রিমুখী রণকৌশল নিচ্ছে মনমোহন সিংহের সরকার। কংগ্রেসের
এক শীর্ষ নেতার কথায়, এই কৌশল সফল হলে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কংগ্রেস। রাজনৈতিক ভাবে যা আশু প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “এ যাত্রায় পেনশন বিল পাশ হলে সেটাই হবে আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ। তার পর শরিকদের বুঝিয়ে, প্রয়োজনে বর্তমান নীতির সামান্য পরিমার্জন করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা হবে।”
তবে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের বড় মাথাব্যথার কারণ অণ্ণা হজারে। পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে তাদের লক্ষ্য, অণ্ণাদের বিক্ষোভকে যতটা সম্ভব লঘু করে ফেলা। সে জন্য লোকপাল নিয়ে বিরোধীদের প্রায় সব দাবিই মেনে নিতে চলেছে সরকার। আজ ইউপিএ-র বৈঠকে শরিক নেতাদের এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন মনমোহন। পরে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, রক্ষাকবচ-সহ প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং গ্রুপ সি কর্মীদের লোকপালের আওতায় রাখার বিষয়টি মেনে নেওয়া হবে।
কাল সর্বদল বৈঠকে বিরোধীদেরও তা জানিয়ে দেওয়া হবে। বিরোধীরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রচার করবেন যে, তাঁদের চাপেই এই দাবি ‘মানতে বাধ্য হল’ সরকার। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, তাতেও এটাই প্রমাণিত হবে যে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদই সর্বোচ্চ। এবং তার জেরে আখেরে প্রাসঙ্গিকতা হারাবে অণ্ণাদের আন্দোলন। যেটা এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি জরুরি।
সরকারি সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে লোকপাল বিল সংসদে পেশ করে চলতি অধিবেশনেই দুই সভায় পাশ করানোর চেষ্টা হবে। এ যাত্রায় দুই সভায় বিলটি পাশ করা না গেলে প্রয়োজনে জানুয়ারি মাসে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে। সেই সঙ্গে আজ বিচারবিভাগের দায়বদ্ধতা, নাগরিক সনদ এবং হুইস্ল ব্লোয়ারদের (সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ফাঁস করে দেন যাঁরা) নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিল পাশ করে অণ্ণাদের চাপে ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
লোকপাল সঙ্কট কাটানোর চেষ্টার পাশাপাশি থমকে থাকা আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি নতুন করে চালু করতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার। বাম-বিজেপি ঐক্য ভেঙে সেই কাজ শুরু করতে চান মনমোহন। গত কালই বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে জীবন বিমা বিল সংসদে পাশ করিয়ে সেই লক্ষ্যে এক পা এগোনো গিয়েছে। আর আজ পেনশন বিলে গ্রাহকদের ‘ন্যূনতম ফেরত সুনিশ্চিত’ করার আশ্বাস দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তাদের পাশে পেতে চেয়েছেন বলে বিজেপি-র দাবি। রাজ্যসভায় বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশে প্রণববাবু বলেন, এনডিএ জমানার অপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচিই পূর্ণ করতে চাইছে ইউপিএ সরকার। সুতরাং বিজেপি পাশে থাকুক। নইলে শুধু রাজনৈতিক কারণে অস্থিরতা তৈরি করে রাখলে অর্থনৈতিক অস্থিরতাও বাড়ছে। পেনশন বিল নিয়ে সরকারের অঙ্গীকারের পর বিজেপি যে ইতিবাচক অবস্থান নেবে, তা আজ সিপিএম নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। স্বাভাবিক ভাবেই বামেরা কার্যত একলা পড়ে গিয়েছেন।
পেনশন বিল নিয়ে শরিকরাও কংগ্রেসের পাশে থাকবে বলে আশা করছেন মনমোহন-প্রণব। বিশেষ করে তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরো-বিতর্কে আপত্তি জানিয়ে বামেদের রাজনৈতিক পরিসর অনেকটাই তাঁরা দখল করে নিয়েছেন। এর পর কেন্দ্রকেও কিছু কর্মসূচি পূরণ করতে দেওয়া দরকার। যদিও লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট অবস্থান হল, পেনশন বিলে গ্রাহকদের স্বার্থ ষোল আনা সুরক্ষিত রাখতে হবে। তা একশো বার বিবেচনা করে তবেই সায় দেবে তৃণমূল।” স্বাভাবিক ভাবেই সরকার ‘ন্যূনতম ফেরত সুনিশ্চিত’ করার ব্যাপারে যে সংশোধন আনছে, তাতে তৃণমূলের পক্ষেও প্রস্তাবিত বিলে সমর্থন জানানো সহজ হবে।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, সংস্কারের বিষয় নিয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের শীর্ষস্তরে আলোচনা চলছে। যেমন, বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পরিমাণ কিছু কম করে ছাড়পত্র দেওয়া যায় কি না। বস্তুত, বিদেসি সংস্থাগুলি বার্তা দিচ্ছে যে, এখনই ৫১ শতাংশ লগ্নির অনুমতি না দিতে পারলে, কিছু কম লগ্নির জন্য অনুমতি দিক ভারত সরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.